Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কুকুরের কামড় বাড়ছে

অবিলম্বে রাস্তার কুকুর নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করেন শহরের পশুপ্রেমীদের একাংশও।

নিশ্চিন্তে: পথের ধারে কুকুর। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ছবি: বিকাশ মশান।

নিশ্চিন্তে: পথের ধারে কুকুর। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ছবি: বিকাশ মশান।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৪
Share: Save:

রাস্তাঘাটে বিড়ালের উপদ্রব তেমন একটা দেখা যায় না দুর্গাপুরে। কিন্তু কুকুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা বিপদও। অবিলম্বে রাস্তার কুকুর নিয়ন্ত্রণে কড়া ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করেন শহরের পশুপ্রেমীদের একাংশও।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ডিপিএল কলোনির এ-জোনে বাড়ির সামনে খেলছিল ছ’বছরের শিশুকন্যা স্মৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ একটি কুকুর এসে খুবলে নেয় তার ডান গালের মাংস। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং পরে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসার পরেও মাসখানেকের মধ্যে মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা জানান, কুকুরের কামড়ের জেরে ‘এনসেফালোপ্যাথি’-তে আক্রান্ত হয় স্মৃতি। আগেও এই এলাকায় কুকুরের কামড়ে বেশ কয়েক জন জখম হয়েছিলেন।

প্রায় পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও ঘটনার কথা ভুলতে পারেননি ডিএসপি টাউনশিপের বাসিন্দা বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়। মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি থেকে সিটি সেন্টারে নিজের দোকানে যাচ্ছিলেন তিনি। মাঝ রাস্তায় আচমকা মোটরবাইকের সামনে চলে আসে এক দল কুকুর। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইক-সহ উল্টে পড়েন তিনি। পা ভেঙে কয়েক মাস শয্যাশায়ী ছিলেন বিষ্ণুবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কোনও দোষ ছিল না। অথচ ফল ভুগতে হল আমায়। রাস্তার কুকুরের উপদ্রব বেড়েই চলেছে।’’

মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে মাসে গড়ে দেড়শো জনেরও বেশি কুকুরে কামড়ানোয় হাসপাতালে আসেন জলাতঙ্কের টিকা নিতে। এর বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে যান অনেকেই। অথচ, ওই হাসপাতাল সূত্রেই জানা যায়, ২০১২-য় কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যাটা ছিল মাসে ১৩০ জন।

কিন্তু কেন বেড়েছে এই কামড়ের সংখ্যা? পশুপ্রেমীদের মতে, বংশবিস্তার রোধ করতে না পারলে কুকুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কুকুরেরা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। এতে যেমন কামড়ানোর ভয় বাড়বে তেমনই দুর্ঘটনার হার বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সে জন্য অবিলম্বে নির্বীজকরণ জরুরি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ‘ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস’-এর (ডিএসপিসিএ) প্রথম বৈঠকে সংস্থার চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠি কুকুরদের নির্বীজকরণের উপরে জোর দেন। ২০১৮-য় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আসানসোল ও দুর্গাপুরে ৫০০টি করে কুকুরের নির্বীজকরণ করা হয়। দুর্গাপুর পুরসভা জানায়, কুকুরের বংশবিস্তার রোধে ধারাবাহিক ভাবে কুকুরের নির্বীজকরণ (অ্যানিমাল বার্থ কন্ট্রোল বা এবিসি) প্রকল্প নেওয়া হয়ে থাকে। বছরে গড়ে হাজারের উপর কুকুরের নির্বীজকরণ করা হয়। তবে তা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন ডিএসপিসিএ-র অন্যতম সদস্য তথা কুকুরদের নির্বীজকরণের সঙ্গে যুক্ত পানাগড়ের সংস্থা ‘অস্তিত্ব’-র সম্পাদক চন্দন গুঁই। তিনি বলেন, ‘‘ধারাবাহিক ভাবে কুকুরদের নির্বীজকরণ করে জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে। তবেই বিপদ এড়ানো যাবে।’’ কিন্তু সে জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তার জোগান নেই বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, একটি কুকুরের নির্বীজকরণের জন্য গড়ে প্রায় ১৩০০ টাকা খরচ হয়। মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘রাস্তার সব কুকুরের নির্বীজকরণের জন্য বহু অর্থের দরকার। পুরসভার একার পক্ষে তা বহন করা সম্ভব নয়। তবু চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dogs Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE