Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বরাদ্দ টাকায় কুলোচ্ছে না, সরব শিক্ষকেরা 

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত ঘোষালের দাবি, “আনাজের দাম বাড়ায় পুঁই, কুমড়ো, পেঁপে খাওয়াতে হচ্ছে। বরাদ্দ বাড়াতে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠিয়েছি।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০০:২৫
Share: Save:

এক দিকে আনাজে আকাল, আর এক দিকে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম— জোড়া ধাক্কায় মাথায় হাত প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তাঁদের দাবি, বেশি পড়ুয়ার স্কুলগুলিতে কোনও ভাবে মিড-ডে মিল চালানো গেলেও যেখানে পড়ুয়া কম, সেখানে নাকানিচোবানি অবস্থা। এ অবস্থায় মিড-ডে মিলের ‘মেনু’ অপরিবর্তিত রাখতে কোথাও চাঁদা তুলছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা, কোথাও আবার কাটছাঁট করা হচ্ছে মেনু।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি শ্রীকান্ত ঘোষালের দাবি, “আনাজের দাম বাড়ায় পুঁই, কুমড়ো, পেঁপে খাওয়াতে হচ্ছে। বরাদ্দ বাড়াতে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠিয়েছি।’’

এই পরিস্থিতিতেও জেলা প্রশাসনের তরফে ব্লক বা পুরসভার মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছে, পড়ুয়াদের পুষ্টিতে ঘাটতি না হওয়ার বিষয়টি প্রত্যেক প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা বা মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে দেখতে হবে। মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে, সপ্তাহে অন্তত দু’দিন ডিম আর প্রতিদিন মুসুর ডাল দিতে হবে। সরকারি নির্দেশিকা অনুয়ায়ী, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া পিছু চাল ও তরকারির ওজন হতে হবে ১০০ গ্রাম আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তা হবে দেড়শো গ্রাম। এ জন্য ছাত্র পিছু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ ৪ টাকা ৪৮ পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দ ৬ টাকা ৭১ পয়সা। এর মধ্যেই জ্বালানি, আনাজ, ডিম, ডাল, মশলা, তেল কিনতে হয় স্কুলগুলিকে। চাল দেয় সরকার।

শিক্ষকদের দাবি, এই সময় আনাজ হিসেবে আলুর সঙ্গে বাঁধাকপি, ফুলকপি, পটল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ ধরে আনাজের যা দাম তাতে সরকারি নির্দেশিকা মানতে নাজেহাল দশা। প্রাথমিক স্কুলেও পড়ুয়া পিছু ছ’টাকার কমে চালানো যাচ্ছে না, দাবি তাঁদের। গত কয়েকদিনে জেলার বিভিন্ন বাজারে আলু ২২-২৪ টাকা, পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে। বাঁধাকপির দাম হয়েছে কেজি প্রতি ৪০ টাকা, একটি ফুলকপি বিকোচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দরে। পটলের কেজি ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। টম্যাটো ও বেগুনের দাম ঘোরাঘুরি করছে ৫০-৬০ টাকায়। এ ছাড়া, আদা, রসুন ও লঙ্কার দামও বছরের অন্য সময়ের চেয়ে বেশি।

বর্ধমান শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শান্তা রায়ের দাবি, “দাম বেড়েছে বলে তো আর বাচ্চাদের না খাইয়ে রাখতে পারব না। সরকারের বরাদ্দ টাকায় হচ্ছে না বলে বাকি টাকাটা শিক্ষিকারাই দিচ্ছি।’’ নতুনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন্য সময়ের মতো এখনও ডিম, পোস্ত, সয়াবিনের তরকারি হচ্ছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ হবিবুল্লারও দাবি, “প্রতি পড়ুয়া পিছু মিড-ডে মিল চালাতে ৬ টাকা খরচ। অতিরিক্ত টাকাটা আমরাই দিচ্ছি।’’ গুসকরার ইটাচাদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবার মেনুতে বদল আনা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক কার্তিক ঘোষ বলেন, “সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। তরকারিতে আনাজের পরিমাণও কমাতে হয়েছে।’’ বড়শুল নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক অনুপম সাধুও বলেন, “বুলবুলের প্রভাবে নষ্ট হওয়ায় দাম দিয়েও আনাজ মিলছে না। পড়ুয়াদের পাতে রোজ রোজ কী দেব, বড় চিন্তার।’’

অন্যত্র ফারাক থাকলেও এ বিষয়ে এক মত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শিক্ষক সংগঠন। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠনের তরফে স্বপন মালিক, বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের রাধাকান্ত রায়, তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির তরফে তপন পোড়েলরা একমত, ‘‘পুষ্টিগুণ বজায় রেখে পড়ুয়াদের পাত ভরানো সত্যিই উদ্বেগের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Primary School Mid Day Meal Budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE