Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কামান দেগেও মরছে না মশা, চিন্তা বর্ধমানে

ডেঙ্গি-মরসুম এখনও শুরু হয়নি। তার মধ্যেই ২০ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রাম্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ জন বলে জানিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

জোরকদমে চলছে সচেতনতা প্রচারও। নিজস্ব চিত্র

জোরকদমে চলছে সচেতনতা প্রচারও। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০১:১১
Share: Save:

ডেঙ্গি-মরসুম এখনও শুরু হয়নি। তার মধ্যেই ২০ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রাম্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ জন বলে জানিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শীতকালে বৃষ্টি প্রায় হয়নি। এখন কালবৈশাখীরও দেখা নেই। তার পরেও ডেঙ্গি রোগীর এমন সংখ্যা দেখে চিন্তায় স্বাস্থ্য দফতর, পঞ্চায়েত কিংবা জেলার নানা পুরসভার কর্তারা। পুরসভার কর্তাদের দাবি, মশা মারতে এ বছর আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না।

গত বছর এই জেলায় প্রায় চারশো জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। এর মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি ছিলেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দা। পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর জানায়, চলতি বছরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকেই ফি মাসে দু’বার করে টানা পাঁচ দিন ধরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফি দিন সন্ধ্যায় নানা ওয়ার্ডে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা-বৈঠকও চলছে। পুরসভা জানায়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ গৌতম চন্দ্রকে মাথায় রেখে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। কী ভাবে মশার লার্ভা নষ্ট করা যায়, এমন নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা।

কিন্তু এর পরেও মশার উৎপাতে বর্ধমানবাসী তো বটেই, শহরের প্রশাসনিক কর্তারা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসনেরই এক কর্তা বলেন, “আমাদের বাংলোয় একটু দাঁড়িয়ে থাকারও উপায় নেই। মশা ছেঁকে ধরবে। কী করে এই মশার উপদ্রব বন্ধ করা যায় তা নিয়ে পুরসভা ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কথা বলা দরকার।” পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “মশা মারার জন্য পুরসভা অনেক আগে থেকেই সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। তার পরেও মশার উৎপাত চিন্তায় রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”

কিন্তু আলোচনা হোক বা ব্যবস্থা, ডেঙ্গির প্রকোপ যে কমেনি, তা বোঝা যায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যালাইজা রিপোর্টে। সেখানে দেখা যায়, ৪৭ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। যদিও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “পূর্ব বর্ধমান ছাড়াও পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি-বীরভূমের বাসিন্দাদের কথাও এই রিপোর্টে রয়েছে। তাই সংখ্যাটা খানিক বেশি।’’ তবে বর্ধমান শহরে এই তিন মাসে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র দু’জন। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ওই দু’জন আবার সল্টলেকে থাকতেন।

যদিও মশার উৎপাত বন্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে বর্ধমান পুরসভার দাবি। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল) খোকন দাস বলেন, “আবর্জনা ও নর্দমা সাফাইয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে আবর্জনা সাফ করা হচ্ছে বলে রাস্তার পাশে ভ্যাটও তুলে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরেই মশার লার্ভা মারার জন্য ৮৪টি যন্ত্র কেনা হয়েছে। আর ধোঁয়া দেওয়ার জন্য আটটি যন্ত্রের দরপত্র হয়ে গিয়েছে।” পুরসভার দাবি, ওই সব যন্ত্র বড় ও ছোট ওয়ার্ডে যথাক্রমে তিনটি ও দু’টি করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও একটি বেসরকারি সংস্থাকে মশা মারার জন্য নিয়োগ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মশা মারার তেল দেওয়া ও কামান দাগার কাজও বর্ধমান পুরসভা আগেভাগেই শুরু করেছে। কিন্তু তাতেও তেমন ফল মিলছে না।

পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “এ বছর জেলার ছ’টি পুরসভা আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্যোগী হয়েছেন। আমাদের সঙ্গে পুরসভাগুলি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE