Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভারী গাড়ি গেলে কাঁপে সেতু

কলকাতার মাঝেরহাট সেতুর একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার পরে বর্ধমানের অনেকেই বলছেন, এখানে এমন ঘটলে আর বেঁচে ফিরতে হবে না। একেবারে দামোদরে সলিলসমাধি!

ভাঙা পড়ে রয়েছে কৃষক সেতুর ফুটপাত। নিজস্ব চিত্র

ভাঙা পড়ে রয়েছে কৃষক সেতুর ফুটপাত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৮
Share: Save:

চল্লিশে চালশে পড়েছে কৃষক সেতুতে।

জলের উপর দাঁড়িয়ে থাকা থামে আগাছা গজিয়েছে। নানা জোড়ের মুখে শিকড় ছড়িয়েছে গাছ। সেতুর উপরে অজস্র ছোট-বড় গর্তে প্রায়ই খারাপ হচ্ছে কোনও না কোনও গাড়ি। তা ছাড়া বালি, পাথরবোঝাই ভারী গাড়ি গেলে রীতিমতো কেঁপে উঠছে সেতু। আর আলোর ব্যবস্থা থাকলেও তা শেষ কবে জ্বলেছে মনে করতে পারেন না যাতায়াতকারীরা।

কলকাতার মাঝেরহাট সেতুর একটা অংশ ভেঙে যাওয়ার পরে বর্ধমানের অনেকেই বলছেন, এখানে এমন ঘটলে আর বেঁচে ফিরতে হবে না। একেবারে দামোদরে সলিলসমাধি! মঙ্গলবার পূর্ত দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (দুর্গাপুর), নির্বাহী বাস্তুকার (বর্ধমান ২)-সহ একাধিক কর্তা কৃষক সেতু পরিদর্শনে যান। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবেরও আশ্বাস, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলার সমস্ত সেতুর ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বর্ধমান শহরের সঙ্গে রায়না, খণ্ডঘোষ, জামালপুর ছাড়াও পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হুগলির একটা বড় অংশের যোগাযোগের জরুরি মাধ্যম হল বর্ধমান-আরামবাগ রোড। ওই রাস্তার উপরে ১৯৭৩ সালে শিলান্যাস হয় কৃষক সেতুর। ১৯৭৮ সালে তা চালু হয়। এই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি চলে। নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ, জল নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা তো বটেই, সারা বছরই বেহাল থাকে সেতু। গর্তের গভীরতা বুঝতে না পেরে রীতিমতো প্রাণ হাতে গাড়ি চালাতে হয় বলেও চালকদের দাবি। এমনকি, কৃষক সেতু পার করেও শান্তি নেই। ডিভিসি সেচখালের উপর যে গর্ত হয়েছে তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।

সেতুর থামে আগাছা। নিজস্ব চিত্র

সেতুর কাছের এক ব্যবসায়ী জগন্নাথ তামাংয়ের দাবি, “পুরো সেতু জুড়ে গর্ত। সে দিকে কারওর নজর নেই। মাঝেরহাটের মতো ঘটনা না ঘটে!” স্থানীয় টোটো চালক সাবেদ আলি, রায়নার বামুনিয়া গ্রামের সোম শেখদের দাবি, “পাথর বা বালির ভারী গাড়ি গেলেই সেতুটি থরথর করে কাঁপে। দাঁড়িয়ে থাকতেই ভয় লাগে।’’ লরি চালক শেখ জাহিরুল কিংবা বাস চালক মিলন দাসদেরও দাবি, “হাম্প থাকায় আদতে সেতুটির ক্ষতি হচ্ছে। দিনের বেলায় বিপদ এড়াতে পারলেও নিষ্প্রদীপ সেতু আমাদের আতঙ্ক ধরিয়ে দেয়।’’

পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও সিআরআরআই (‌সেন্ট্রাল রোড রিসার্চ ইনস্টিটিউট) যৌথ ভাবে ওই সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ‘ফিট’ বলে জানিয়েছিল। তিন বছরে আর কোনও পরীক্ষা হয়নি? দফতরের এক কর্তার কথায়, “ওই সংস্থা কিছু পরামর্শ দিয়েছিল। সেই মতো আমরা কাজ করছি। এ ছাড়াও সেতুটিকে নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।’’ জানা যায়, ফুটপাথ ও রাস্তার সংযোগে সেতুতে ‘গার্ড ওয়াল’ তৈরি করা হচ্ছে। ১১টি ‘এক্সপ্যানশন জয়েন্টে’র বেশির ভাগ পুরনো হয়ে গিয়েছে। সেগুলি আধুনিক পদ্ধতিতে সংস্কারের জন্য দু’কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলেও পূর্ত দফতরের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shaking Bridge Heavy Car
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE