Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ধর্ষণের অভিযোগের পরে চিন্তা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে

আঁধারে ঢাকা হাসপাতালে সুরক্ষায় প্রশ্ন

অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত আলো নেই বলেই নানা রকমের দুষ্কর্ম ঘটে চলেছে। তারই পরিণতি হাসপাতালের বহির্বিভাগের বারান্দায় স্বামী-মেয়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা বছর সাতাশের ওই মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনা।

উপরে, অন্ধকারাচ্ছন্ন হাসপাতাল চত্বর।ছবি: উদিত সিংহ।

উপরে, অন্ধকারাচ্ছন্ন হাসপাতাল চত্বর।ছবি: উদিত সিংহ।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:২৩
Share: Save:

রাতের হাসপাতাল কি সুরক্ষিত? বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষণের অভিযোগ সেই প্রশ্নটাই উস্কে দিল।

সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পর্যাপ্ত আলো নেই বলেই নানা রকমের দুষ্কর্ম ঘটে চলেছে। তারই পরিণতি হাসপাতালের বহির্বিভাগের বারান্দায় স্বামী-মেয়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা বছর সাতাশের ওই মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনা। মঙ্গলবার ওই মহিলার শারীরিক পরীক্ষাও হয় হাসপাতালে।

এমন ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁয়ের। এ দিন হাসপাতালে এসে তিনি প্রথমেই পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন। হাসপাতালে টহল বাড়ানোরও কথাও বলেন। পুলিশের যদিও দাবি, হাসপাতালে রাতভর তিন থেকে চার বার টহল দেওয়া হয়। ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বহির্বিভাগের পিছনে পার্কিং জোনের দিকে সরু বারান্দায়। ওই বারন্দার পাঁচিলটি প্রায় আড়াই ফুট উঁচু, ফলে বাইরে থেকে কী ঘটছে তা জানা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ওই বারান্দায় রাতভর রোগীর আত্মীয়স্বজনেরা শুয়ে থাকেন বলে সিভিক ভলেন্টিয়ার বা পুলিশও বারান্দায় ওঠে না।

হাসপাতালের পার্কিং জোনের একাধিক কর্মীর দাবি, “শনি, রবি বা অন্য ছুটির দিনে মাঝেমধ্যেই মাঝরাতে এক দল পুরুষ-মহিলাকে হাসপাতালে দেখা যায়। সিভিক ভলেন্টিয়ারেরা তাঁদের হাসপাতাল থেকে বের করেও দেন। কিন্তু চেনা লোকজন বারান্দায় কী করছে, সেটা কী জানা সম্ভব?” প্রায়ই রোগী নিয়ে হাসপাতালে এসে রাত কাটান বীরভূমের মুলুক এলাকার বাসিন্দা সন্তু রাজবংশী, রায়নার কাইতি পঞ্চায়েতের আসলাম শেখরা। তাঁদের দাবি, “পার্কিং জোন-সহ হাসপাতালের বিভিন্ন এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে আলো জ্বলছে না। দুষ্কৃতীরা সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এ রকম ঘটনা হাসপাতালের ভিতর ঘটলে চিন্তার বিষয়।’’ পার্কিং জোনের কর্মীরাও জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক মত মেলে না বলেই আলো কখনও জ্বলে, কখনও নেভে।

এ ঘটনা জানার পরেই পূর্ত দফতর (বিদ্যুৎ)-কে ডেকে পাঠান হাসপাতাল সুপার। কড়া ভাষাতেই বলতে শোনা যায়, ‘কোনও ঘটনা না ঘটলে কী আপনাদের টনক নড়ে না? কেন আলো জ্লবে না? ফিউজ হয়ে যাওয়ার পরে পাল্টাতে এত সময় লাগবে কেন?’ ওই কর্মীদের সাফাই, “গত দু’তিন ধরে আলোগুলি পাল্টানো হচ্ছে। নতুন বাল্ব বা টিউব কালীপুজোর আগে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দেরি হচ্ছে। আমরা আরও ১০টি জায়গায় নতুন আলো লাগানোর ব্যবস্থা করেছি। কালী পুজোর পরেই লাগানো হবে।’’

এই হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে সমস্যা ছিল। সেই সমস্যা কেটে গেলেও ‘সুরক্ষা’ যে ফেরেনি তা বারবার প্রমাণ হয়েছে। কখনও হাসপাতালের ভিতর থেকে মাদক খাইয়ে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, আবার কখনও কেপমারি করে গয়না ছিনতাইয়েরও অভিযোগ উঠেছে। রবিবারের রাতের ঘটনাও সুরক্ষা কতটা বেআব্রু—সেটাই জানান দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan Hospital Rape Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE