Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খোলার বার্তা মিলল না, হতাশা দুই কারখানায়

আশাটা কয়েক দিন ধরেই তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু রবিবার দুপুরের পরে আবার শুধুই দীর্ঘশ্বাস ইস্কোর আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্গাপুরের বন্ধ দুই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা খোলা নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি। ফলে ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) এবং ‘হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এইচএফসিএল)-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েই গেল দুর্গাপুরবাসীর।

এমএএমসি এবং এইচএফসিএল কারখানা।—ফাইল চিত্র।

এমএএমসি এবং এইচএফসিএল কারখানা।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০১:৫২
Share: Save:

আশাটা কয়েক দিন ধরেই তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু রবিবার দুপুরের পরে আবার শুধুই দীর্ঘশ্বাস ইস্কোর আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্গাপুরের বন্ধ দুই রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা খোলা নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি। ফলে ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) এবং ‘হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এইচএফসিএল)-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েই গেল দুর্গাপুরবাসীর।

এমএএমসি চালু হয় ১৯৬৫ সালে। খনির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি হত সেখানে। নানা কারণে কারখানাটি রুগ্‌ণ হতে থাকে। ১৯৯২ সালে এমএএমসি চলে যায় বিআইএফআর-এ। শেষ পর্যন্ত কারখানাটি নতুন করে চালু করতে উদ্যোগী হয় তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল), ‘কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (সিআইএল) এবং ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’ (ডিভিসি)। তিন সংস্থা কনসর্টিয়াম গড়ে ২০১০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ একশো কোটি দর দিয়ে কারখানার দায়িত্ব নেয়। ঠিক হয়, উৎপাদনের দায়িত্বে থাকবে বিইএমএল। উৎপাদিত খনি যন্ত্রাংশ কিনে কয়লা উত্তোলন করবে সিআইএল। সেই কয়লা কিনবে ডিভিসি। যাতে বাজার নিয়ে কোনও অনিশ্চয়তা তৈরি না হয়, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তার পরে চার বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ‘শেয়ার হোল্ডিং এগ্রিমেন্ট’-এর বিষয়ে বিইএমএল আজও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ছাড়পত্র পায়নি।

ইউরিয়া সার তৈরি হত দুর্গাপুরের এইচএফসিএল কারখানায়। ১৯৭৪ সালে কারখানা চালু হয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই লোকসানে চলতে থাকে কারখানা। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। কারখানা চলে যায় বিআইএফআর-এ। ২০০৭ সালে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট কারখানা খোলার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়। অর্থনীতি বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি কারখানার পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে সায় দেয় ২০১১ সালে। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন সার প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত জেনা সংসদে জানিয়েছিলেন, কারখানা ফের চালুর জন্য ‘ড্রাফট রিহ্যাবিলেশন স্কিমস’ জমা দেওয়া হয়েছে বিআইএফআর-এর কাছে। বিআইএফআর তা যাচাই করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও আসেনি।

দুই কারখানার ভবিষ্যৎ কী?

এমএএমসি-র আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ইউনিয়ন’-এর নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় জানান, আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের কাছে কারখানা খোলার ব্যাপারে দরবার করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে কলকাতায় গিয়ে সাংসদের সঙ্গে দেখা করে বিশদে পরিস্থিতি জানান। মোদীর আসানসোল সফরের পরে এ দিন তাঁর বক্তব্য, ‘‘একটা ক্ষীণ আশা ছিল। আসলে বছরের পর বছর আমরা অপেক্ষা করছি। ক্রমশ পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে।’’ কারখানার সিটু নেতা তথা সিটুর বর্তমান জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার— কোনও তরফ থেকেই কারখানা খোলার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ হয়নি গত কয়েক বছরে।’’

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এইচএফসিএল নিয়ে গত ৬ মে দিল্লির বাসভবনে বাবুল সুপ্রিয় যৌথ ভাবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং রসায়ন ও সার মন্ত্রী অনন্ত কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে দিনই তিনি রাজ্য সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই খবর দুর্গাপুরে পৌঁছতে নতুন করে এইচএফসিএল নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দেন শহরের অনেকে। তাঁরা ভেবেছিলেন, বার্নপুর থেকে হয়তো এইচএফসিএল নিয়ে কোনও বার্তা মিলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে কিছু হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার কয়েক জন প্রাক্তন কর্মী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে বেসরকারি উদ্যোগে এইচএফসিএল খোলার কথা বলেছিল। তার পরে প্রায় বছর ঘুরতে চলল। স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছি আমরা।’’

বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে দলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি অখিল মণ্ডল জানান, দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলি খোলার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য দলের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। তাঁর দাবি, ‘‘কয়েক দশকের পুরনো সমস্যা। সুরাহার জন্য সময় দিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE