Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আঁধার চোখেই লড়াই

কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ার রামকৃষ্ণপল্লিতে পাটকাঠি, টিন দিয়ে তৈরি ঘরে পাঁচ জনের সংসার। বাবা শুকলাল বৈদ্য ফুচকা বিক্রি করেই সংসার চালান। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তিনি ছেলের পড়াশোনাও করাচ্ছেন ওই টাকাতেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০০:২১
Share: Save:

জন্ম থেকেই ছেলেটা দেখতে পায় না। শুধু সে নয়, তিন ভাইয়েরই একই দশা। তারপরেও পড়াশোনা ছাড়েনি তারা। বৈদ্যবাড়ির মেজ ছেলে সুমন এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৬৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে নজর কেড়েছে।

কালনার পূর্ব সাতগাছিয়ার রামকৃষ্ণপল্লিতে পাটকাঠি, টিন দিয়ে তৈরি ঘরে পাঁচ জনের সংসার। বাবা শুকলাল বৈদ্য ফুচকা বিক্রি করেই সংসার চালান। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তিনি ছেলের পড়াশোনাও করাচ্ছেন ওই টাকাতেই। শুকলালবাবু জানান, দিনে মেরেকেটে দেড়শো টাকা রোজগার হয়। তাতেই আধপেটা খেয়েই ছেলেদের পড়াশোনা চালান তিনি। সুমনের ফল দেখে অবশ্য চিন্তাটা আরও বেড়ে গিয়েছে তাঁর।

কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন পেয়েছে ৩৩৫।

এর আগে নবদ্বীপের একটি ব্লাইন্ড স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে সে। তারপর নবদ্বীপ ধাম বিদ্যালয় থেকে নবম এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া। উচ্চ মাধ্যমিকে এক জন লেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দেয় সে। সুমন বলে, ‘‘বাবার সামান্য আয়। তার মধ্যেই অনেক কষ্ট করে দাদাকে ডেয়ারি অ্যান্ড এগ্রিকালচার নিয়ে পড়াচ্ছে। ছোট ভাই আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবে। আমার আর পড়া হবে কি না জানি না।’’ সুমনের আফশোস, ‘‘আর একটু ভাল বইপত্র পেলে আরও ভাল ফল করতে পারতাম।’’

মা নীলমণিদেবী জানান, ফুচকার বাজার ভাল হলে হাঁড়ি চড়ে। না হলে আধাপেটা খেয়েই তাকে ছেলেরা। তবে ছোট থেকেই ওদের জেদ প নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কালনা মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষও জানানস অত্যন্ত মনোযোগী ছাত্র সুমন। প্রতিবন্ধকতা, অর্থকষ্টের মধ্যেও ভাল ফল করেছে। স্কুল ওর পাশে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE