Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
TMC

ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় ‘ভুল’, মানছেন তৃণমূল কাউন্সিলর

মহকুমা প্রশাসন ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আমপান’-এর ধাক্কায় বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে দাবি করে শহরের ন’টি ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দাই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০২:৪৩
Share: Save:

দোতলা বাড়ির দেওয়ালে আঁচড় পড়েনি। অথচ, অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’-এর তাণ্ডবে বাড়ির ক্ষতিপূরণের টাকা। কেউ সে টাকায় বাড়ির পড়ে থাকা ঘর মেরামতও করে নিয়েছেন। কাটোয়ার তৃণমূল কাউন্সিলরের একাধিক ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে এমন সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ক্ষতিপূরণ পাওয়া বাড়ির মালিক, তৃণমূল কাউন্সিলর কার্যত মেনেও নিয়েছেন ‘ভুল করে’ টাকা পাওয়ার কথা। তাঁদের দাবি, ওই টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

কাটোয়ার পুরসভার প্রশাসক তথা বিধায়ক তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতি হয়নি অথচ টাকা নিয়েছেন, এমন কেউ থাকলে দ্রুত টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’’

মহকুমা প্রশাসন ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘আমপান’-এর ধাক্কায় বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে দাবি করে শহরের ন’টি ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দাই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। ২ জুন তাঁদের মধ্যে ৬৩ জন ঘর ভাঙার ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ হাজার করে পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেরই বাড়িতে আদৌ ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে বিজেপি।

বিজেপির জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, ততই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে। সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলরেরা ঘনিষ্ঠদের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। এখন দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসায় টাকা ফেরানোর কথা বলছেন।’’ সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইলা হাজরার আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠ লোকজন সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে টাকা নিয়েছেন। তাঁদের কারও দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে, কেউ বা ‘সবার জন্য গৃহ’ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন। এ নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামব।’’

কাউন্সিলর ইলাদেবীর বক্তব্য, ‘‘ঝড়ের পরে এক ঘণ্টার মধ্যে তড়িঘড়ি করে নামের তালিকা দিতে হয়েছে। পরে দেখেছি, তার মধ্যে কয়েকজনের পাকা বাড়ি আছে বা সরকারি বাড়ি পেয়েছেন। তাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলেছি।’’ কিন্তু সে টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন বলে দাবি প্রাপকদের একাংশের।

পঞ্চবটি পাড়ার বাসিন্দা, ভগবতী হাজরার দাবি, “দোতলা বাড়ি থাকলেও আমরা গরিব মানুষ। স্বামীর নামে টাকা এসেছে। সে টাকা খরচ করে ফেলেছি। এখন দেওয়া মুশকিল।’’ ওই পাড়ারই বাসিন্দা, কাউন্সিলরের ভাই বিনয় হাজরার দাবি, “আমাদের পাকা বাড়ির ঝড়ে কোনও ক্ষতি হয়নি। অথচ, ভুল করে টাকা চলে এসেছে। আমরা ওই টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’’ একই দাবি কাউন্সিলরের এক বৌমা সাথী হাজরারও। আবার ওই পাড়াতেই বড়সড় পাকা বাড়ি অনিতা হাজরার। তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি। ওই টাকা দিয়ে দোতলার একটি ঘর মেরামত করেছি।’’

মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্লর আশ্বাস, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’ রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘টাকা ফেরানো হবে। বিরোধীদের কোনও কর্মসূচি না থাকায় এ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE