Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বালির গাড়িতে রাশ টানতে ১৪৪ ধারা

বারবার নির্দেশ এসেছে, অভিযান হয়েছে, তবু বালি-রাজ চলছেই।দিনেদুপুরে রায়নার হিজলনায় দামোদর থেকে বালি তোলা কিংবা কৃষক সেতুর থামের গা ঘেঁষে বালি চুরি, বালি মাফিয়াদের দাপট কমেনি। জামালপুরের পাঁচড়া পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্য বেআইনি ভাবে বালি তোলায় বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন।

রায়নার হিজলনায় দামোদরের চরে বালি তোলা।

রায়নার হিজলনায় দামোদরের চরে বালি তোলা।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০০:৪৯
Share: Save:

বারবার নির্দেশ এসেছে, অভিযান হয়েছে, তবু বালি-রাজ চলছেই।

দিনেদুপুরে রায়নার হিজলনায় দামোদর থেকে বালি তোলা কিংবা কৃষক সেতুর থামের গা ঘেঁষে বালি চুরি, বালি মাফিয়াদের দাপট কমেনি। জামালপুরের পাঁচড়া পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্য বেআইনি ভাবে বালি তোলায় বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই এলাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন বর্ধমান সদরের (দক্ষিণ) মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলে। তিনি জানান, জামালপুরে ৩২ বিঘা থেকে দক্ষিণ মোহনপুর পর্যন্ত দামোদরের পাড়ে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেচ দফতর ওই এলাকায় বোর্ড টাঙিয়ে বিধিনিষেধ জানিয়ে দেবে। মাইকেও প্রচার করা হবে বলে জানান তিনি।

দিন কয়েক আগেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের বালি তোলা বন্ধের নির্দেশ জানিয়ে গিয়েছেন সেচ মন্ত্রী। এপ্রিল থেকে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি করেছেন। কিন্তু মঙ্গলকোট, রায়নার একাধিক জায়গা ঘুরে দেখা যাচ্ছে নিয়মকে বু়ড়ো আঙুল দেখিয়ে নদীগর্ভ খুঁড়ে বেআইনি বালি তোলা চলছেই। বালিবোঝাই গাড়ির যাতায়াতে দুর্ঘটনাও ঘটেছে মাঝেমধ্যে। প্রশাসনের সূত্রে খবর, দিনভর দামোদর ও অজয়ের পাড় থেকে বালি তুলে ডাম্পার, লরি ও ট্রাক্টরগুলি দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে রাজারহাট, নতুনহাট, হুগলি, হাওড়া যাচ্ছে। কখনও পুলিশের তাড়া থেকে বাঁচতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, কখনও ভারী ওজন নিয়ে ক্রমাগত যাতায়াতে রাস্তা খারাপ হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে। জামালপুরের ওই এলাকায় ক্রমাগত বালির গাড়ি যাতায়াতে বাঁধ এ কৃষিজমির ক্ষতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সেচমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে সজাগ হওয়ার কথা বললেও সে নির্দেশ যে কার্যকর হয়নি তা বোঝা গিয়েছে পরের দিনই। সোমবার জামালপুরের রামনাথপুরে বালিবোঝাই গাড়ির ধাক্কায় জখম হয় এক পড়ুয়া। গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পথ অবরোধ করেন বাসিন্দারা। পরে জামালপুর থানা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ওই ঘটনার পরে জেলার এক তৃণমূল নেতাও ক্ষোভ জানিয়ে পুলিশকে বলেন, ‘‘মন্ত্রীর নির্দেশের পরেও এ ভাবে বালি উঠছে। আপনাদের বিষয়টি নজর করা দরকার। বারবার সামলানো যাবে না।’’

পলেমপুরে সেতুর নীচ দিয়ে চলছে বালিবোঝাই নৌকা।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বালিবোঝাই গাড়ির ধাক্কায় বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর ও কাটোয়া মহকুমায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেমারির রসুলপুরে বালির গাড়ির ধাক্কায় এক ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে গোলমাল বাধে জনতা-পুলিশের মধ্যে। এমনকী, বালির গাড়ি ধাক্কায় পুলিশের গাড়ি উল্টে চার পুলিশকর্মীও জখম হন।

ঘুরে দেখা গিয়েছে, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকায় বাঁধ কেটে প্রকাশ্যেই বালি লুঠ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, বালি তোলার পরে নৌকায় পাড়ে এনে জমিয়ে রাখা হয়। পরে রাতে বা ভোরে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী, বালি তুলতে গিয়ে অনেক সময় সেতুর দিকেও নজর থাকে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কোথাও আবার চর পেরিয়ে নদীর মাঝামাঝি গিয়ে বড় লরি বা ডাম্পার রাখা হচ্ছে। সেখানে বালি তুলে তারা পাড়ি দিচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এমনকী, বালির গাড়ি যাওয়ার জন্য নদীর চরেই রাস্তা করে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বর্ষাতেই ক্রমাগত বালির গাড়ি যাওয়া-আসা করায় গ্রামের মোরামের রাস্তা কিংবা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ছে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের একসঙ্গে বালি খাদানে অভিযান চালানোর দাবিও তুলেছেন তাঁরা।

সেচ দফতরের বর্ধমান ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (বালি) স্বাতী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। থানাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সেচ দফতরের দেওয়া ‘শর্ট পারমিটে’র বালি খাদান কোথাও চলছে না।” আর পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের দাবি, ‘‘প্রতিদিন নজরদারি চলছে। বালির গাড়ি ধরে নিয়মমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আরও জোরদার নজরদারি চালানো হবে।’’

ছাত্রের মৃত্যুতে অবরোধ

আউশগ্রামের পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন গ্রামবাসীদের একাংশ। রবিবার ভোরে দুর্গাপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রের। সোমবার সকাল ৯টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা বাঁকুড়ার কোতুলপুরের রামডিহা গ্রামে বাঁকাদহ-জয়রামবাটি রোড অবরোধ করেন তাঁরা। সন্দীপ যে স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, তার পড়ুয়ারাও প্ল্যাকার্ড হাতে সামিল হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বর্ধমানের আউশগ্রাম থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানানো হলে অবরোধ ওঠে। সন্দীপের বাবা বলরামবাবু সোমবারও বলেন, ‘‘ছেলের সারা শরীরে যে ভাবে আঘাতের চিহ্ন ছিল, তাতে আমাদের ধারণা, বাস থেকে পড়ার কথা ঠিক নয়। আমরা তদন্ত চাই।’’ বলরামবাবুর দাবি, মাস দুয়েক আগে সন্দীপ তাঁকে জানান, হস্টেলে নানা ভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sand smuggling Sand Adminstration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE