নার্সিংহোমে পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র
নিঃসন্তান দম্পতির ঘরে আচমকা শিশুকে দেখে সন্দেহ হয়েছিল প্রতিবেশীদের। পুলিশ তদন্তে নামতেই উঠে আসে, শিশু কেনাবেচার কথা। নাম জড়ায় বর্ধমানের এক নার্সিংহোম ও তার এক কর্মীরও। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে। শিশু বিক্রি নিয়ে তদন্তে নামে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সোমবার বর্ধমান ভাঙাকুঠি এলাকায় ওই নার্সিংহোমে তদন্তে গিয়ে আরও ‘অব্যবস্থা’র হদিস পেলেন আধিকারিকেরা।
তাঁদের দাবি, ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট’ আইন অনুযায়ী, যা-যা পরিকাঠামো থাকার কথা তার প্রায় কিছুই নেই ওই নার্সিংহোমে। ডাক্তার, নার্সদেরও দেখা মেলেনি। সন্ধান পাওয়া যায়নি কোনও রেজিস্টার বা অডিটের নথিরও। তদন্ত শেষে এসিএমওএইচ (বর্ধমান সদর) আত্রেয়ী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রচুর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। যা দেখেছি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেব।’’
এ দিন জেলা পুলিশের তরফেও শিশু পাচার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই নার্সিংহোমটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’’ রিপোর্টে কী আছে?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই নার্সিংহোম থেকে আগেও শিশু ‘পাচার’ হয়েছে। পুলিশেরও দাবি, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ধৃত টেকনিশিয়ান শৈলেন রায়ের মাধ্যমেই নিঃসন্তান দম্পত্তিরা যোগাযোগ করতেন। পানুহাটের ওই দম্পত্তিও শৈলেনেরই দ্বারস্থ হন। পুলিশ জেনেছে, বিক্রি করা শিশুটির প্রকৃত মা থাকেন নদিয়ার কালীগঞ্জে। ২৮ জুন বিকেলে শিশুটির জন্ম হয়। পানুহাটের ওই মহিলাকেও নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় ওই দিন রাতে। ঘণ্টা খানেক পরে সদ্যোজাতকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট’ আইন মোতাবেক কোনও নথি পাওয়া যায়নি। ফলে, কখন কোন রোগী ভর্তি হচ্ছেন, কখন কার ছুটি হচ্ছে সে তথ্য যেমন নেই, তেমন প্রসূতি ও গর্ভবতী সম্পর্কেও কোনও তথ্য নেই।
স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এ দিন তদন্তে গিয়ে আরএমও, নার্স দেখা যায়নি। আট শয্যায় ‘আইসিইউ’তেও কোনও লোকের দেখা মেলেনি। নার্সিংহোমে ৫০টি শয্যার অনুমোদন রয়েছে অথচ ৫৯টি শয্যা দেখা যায়। টেকনিশিয়ান, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টদেরও খোঁজ মেলেনি। এ ছাড়া, অগ্নি নিবার্পণ ব্যবস্থা, জলের লাইন, অক্সিজেনের পাইপের সমস্যা রয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। ডায়ালিসিস ইউনিটে দু’টি শয্যা থাকার কথা থাকলেও তিনটি দেখা গিয়েছে। নার্সিংহোমের রান্নাঘরও অপরিচ্ছন্ন। অসর্তক ভাবে রান্না হতে দেখা গিয়েছে।
তবে এত ‘অব্যবস্থা’র পরেও দেখা যায়, ওই নার্সিংহোমের সামনে ভিড় রয়েছে। রোগী ভর্তি হচ্ছেন। শিশু পাচারের অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ওই নার্সিংহোমের মালিক কাশেম আলিকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। জবাব আসেনি মেসেজের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy