Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ছড়িয়ে অজস্র নিদর্শন, তবু দেখা নেই পর্যটকের

বিদ্যাচর্চার জন্য নবদ্বীপ থেকে নদী পেরিয়ে আসতেন নিমাই। যে গাছের তলায় বসে পাঠ চলত বলে কথিত রয়েছে, সেটি এখনও বেঁচে। পূর্বস্থলীর নানা এলাকায় রয়েছে শ্রীচৈতন্যের এমন নানা স্মৃতি। এ ছাড়াও, ছড়িয়ে রয়েছে নানা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। সেগুলি নিয়ে একটি পর্যটন পরিকাঠামো তৈরি করার দাবি নতুন নয়। প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, সেই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

বিদ্যাচর্চার জন্য নবদ্বীপ থেকে নদী পেরিয়ে আসতেন নিমাই। যে গাছের তলায় বসে পাঠ চলত বলে কথিত রয়েছে, সেটি এখনও বেঁচে। পূর্বস্থলীর নানা এলাকায় রয়েছে শ্রীচৈতন্যের এমন নানা স্মৃতি। এ ছাড়াও, ছড়িয়ে রয়েছে নানা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। সেগুলি নিয়ে একটি পর্যটন পরিকাঠামো তৈরি করার দাবি নতুন নয়। প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, সেই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।

নবদ্বীপ ও কালনা শহরের অদূরেই রয়েছে পূর্বস্থলী ১ ব্লক। ওই দুই এলাকায় নানা নিদর্শনের টানে সারা বছর পর্যটকের ভিড় জমে। কিন্তু, পূর্বস্থলীতে সে ভাবে পর্যটক আনাগোনা দেখা যায় না। কিন্তু নজর কাড়ার উপাদান কম নেই এখানে।

দোগাছিয়ায় রায়চৌধুরী পরিবারের নানা মন্দির রীতিমতো দর্শনীয়। টেরাকোটার কারুকাজের গোপীনাথ জিউ মন্দির, দশভুজার মন্দির, দোলতলা মন্দির চোখ টানে মানুষের। বিদ্যানগর গ্রামে বাস ছিল পণ্ডিত গঙ্গাদাসের। তাঁর কাছেই বিদ্যাচর্চার জন্য আসতেন শ্রীচৈতন্য। জনশ্রুতি, যে গাছের নীচে বিদ্যাচর্চা চলত, সেখানে আস্ত একটি কলম পুঁতেছিলেন নিমাই। সে জন্য অনেকে গাছটিকে ‘কলম বৃক্ষ’ বলে চিহ্নিত করেন।

কথিত রয়েছে, বিদ্যাচর্চা শেষে শ্রীচৈতন্য বিশ্রাম নিতেন গোপীনাথ মন্দিরে। মহাপ্রভুর বিশ্রামস্থলের জন্য এক সময়ে এলাকার নাম ছিল বিশ্রামনগর। পরে নাম হয় শ্রীরামপুর। স্থানীয় ইতিহাস গবেষকেরা জানান, নিমাই সন্ন্যাস গ্রহণের পরে ভিক্ষা করেছিলেন জাহান্নগরের একটি গ্রামে। সেটি মাগনপুর নামে পরিচিত। সেখানে তৈরি হয়েছে তাঁর একটি পূর্ণাবয়ব একটি মূর্তি। জাহান্নগর স্টেশনের কাছে রয়েছে কপিল মুনির আশ্রম। সেখানে একটি পুকুরে খেলা করে বড়-বড় মাছ। দর্শনার্থীরা খাবার দিলে পুকুরের ধারে হাজির হয় তারা।

জাহান্নগরে রয়েছে সারঙ্গমুরারী আশ্রম। এলাকার ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, গঙ্গাদাস পণ্ডিতের টোলে পড়তে যাওয়ার সময়ে সারঙ্গদেবের সঙ্গে দেখা করতেন মহাপ্রভু। কথিত রয়েছে, সারঙ্গদেব নদীর ঘাটে স্নানের সময়ে এক মৃত বালক শরীর স্পর্শ করে। মুরারী নামে ওই বালকের প্রাণ সঞ্চার করেন তিনি।

সুলুন্টু গ্রামে রয়েছে অষ্টাদশ শতকের প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির বেশ কিছু নিদর্শন নষ্ট হয়ে গেলেও এখনও বেশ আকর্ষণীয়। সমুদ্রগড়ে দ্বিজবাণীনাথ প্রতিষ্ঠিত গৌড়গদাধর মন্দির, বৃন্দাবন দাসের পাঠবাড়ি, ভাতশালা গ্রামে পঞ্চানন ঠাকুরের মন্দির, ভাণ্ডারটিকুরি এলাকায় ব্রাহ্মাণী মন্দির, কুঠিরপাড়ার তপোবন আশ্রম, চাঁপাহাটি মন্দির, পণ্ডিত বুনোরামনাথের জন্মস্থান, পাঁচলকিতে যাদুবিন্দু গোঁসাইয়ের সমাধিস্থল, সাঁইবাড়ির বিষ্ণু মূর্তি, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, গহকের বুড়োমা কালীতলা।

এলাকায় রয়েছে চাঁদের বিল, বাঁশদল বিল, মুড়িগঙ্গার মতো জলাশয়ও। শান্ত বাঁশদহ বিলের পাড়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তও দেখতে আসেন অনেকে। আধুনিক যাত্রার রূপকার মতিলাল রায়ের জন্মস্থান এই ব্লকের ভাতশালা গ্রামে। তার স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে যাত্রা গবেষণা কেন্দ্র। বেদের বঙ্গানুবাদকারী দুর্গাদাস লাহিড়ী জন্মেছিলেন এই এলাকার চকবামুন গড়িয়া এলাকায়।

এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘ইদানীং বহু পর্যটকের পা পড়ছে পূর্বস্থলীতে। তাঁদের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tourists Purbasthali Nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE