সাজছে দুর্গাপুরের পারুলিয়ায় বাগানপাড়া। নিজস্ব চিত্র।
লকডাউনের ধাক্কা খানিকটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও বাঁধনা উৎসবে এ বার তেমন ভাবে মেতে উঠতে পারছেন না তাঁরা। এমনটাই দাবি করেছেন জেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজন। তাঁরা জানান, আর্থিক সমস্যা তো আছেই। তবে স্বাস্থ্যবিধির গেরো। কিন্তু এই ধর্মীয় আচার তো বন্ধ রাখা যায় না। তাই নমো নমো করেই পালন করছেন তাঁদের এই প্রধান উৎসব।
১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বাঁধনা উৎসব। পাঁচ দিনের এই উৎসব চলবে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। জেলায় দেড় হাজারেরও বেশি আদিবাসী গ্রাম রয়েছে। এ বার খুব সাদামাটা ভাবে উৎসব পালন করা হচ্ছে বলে জানালেন আদিবাসী কো-অর্ডিনেশন কমিটির আসানসোল-দুর্গাপুর জোনের সম্পাদক মোতিলাল সোরেন। তাঁর দাবি, মূলত করোনা পরিস্থিতির কারণেই এ বার উৎসব অনেকটাই ফিকে। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় সাত মাস কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। আনলক পর্বেও অনেকেই পুরনো কাজে বহাল হতে পারেননি। নতুন কাজও খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই উৎসব এ বার জৌলুসহীন হয়ে পড়েছে।’’ মোতিলালবাবুর দাবি, ‘‘স্বাস্থ্যবিধীর থাকা মাথায় রেখে নাচ-গানের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এক জায়গায় বহু জমায়েতও করা যাচ্ছে না। যানবাহন তেমন ভাবে না চলায় আত্মীয় পরিজনেদের যাতায়াত বন্ধ হয়েছে।’’
আসানসোলের উপকণ্ঠে অবস্থিত শিল্পাঞ্চলের বৃহৎ আদিবাসী গ্রাম হারামডিহিতে গিয়ে দেখা গেল, জনাকয়েক আদিবাসী যুবক যুবতী উৎসবে মেতে উঠেছেন। কিন্তু খুবই সাদামাটা ভাবে। বহু বাড়ির দেওয়াল, উঠোনে এ বার রঙের প্রলেপ পড়েনি। কেন এই অবস্থা জানতে চাইলে, নিজের মাটির বাড়ির বিবর্ণ দেওয়াল দেখিয়ে মকর হেমব্রম বলেন, ‘‘প্রতি বছর বাড়ির দেওয়ালে রঙের নকশা ফুটে উঠত। সাত মাস কর্মহীন কাটিয়েছি। রং কেনার টাকা নেই!’’ শুকু টুডু বলেন, ‘‘আমাদের উৎসবের মূল খাবার ‘পাত্রা’ পিঠে। টাকার অভাবে পর্যাপ্ত উপকরণ পাচ্ছি না বলে সেই পিঠেও বানাতে পারছি না।’’
গ্রামেরই বাসিন্দা হিরালাল সোরেন জানালেন, বাঁধনা উৎসবে কাঁচা শালপাতা একটি প্রধান উপকরণ। বহু কাজে এই পাতা ব্যবহৃত হয়। অন্য বছর পানাগড়, পুরুলিয়ার গড় পঞ্চকোট, বাঁকুড়ার বিহারীনাথ এলাকা থেকে একদল মহিলা-পুরুষ কম দামে এই পাতা গ্রামে গ্রামে বিক্রি করতে আসেন। এ বার যানবাহনের অভাবে তাঁরা আসেননি। গ্রামের মানুষকে কয়েক গুন বেশি দাম দিয়ে বহু দূর থেকে পাতা আনতে হয়েছে। গ্রামের একটি পরিবারে গিয়ে দেখা গেল, চাল গুঁড়োর সঙ্গে মুরগির মাংস মেখে তা রুটির মতো গোলাকৃতি করে কাঁচা শালপাতায় মুড়ে কাঠের আগুনে সেঁকে পিঠে তৈরি করছেন সুরজমনি সরেন। তিনি জানন, উৎসবে এটাই তাঁদের সমাজের প্রধান খাবার। কিন্তু এ বার অনেকেই তা বানাতে পারছেন না। তিনি বলেন, উৎসবের এই দিনগুলিতে তাই পরিচিত জনেদের জন্য যৎসামান্য তৈরি করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy