Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাক দাঁড়ালেই ‘টাকা দাও’, জাতীয় সড়কে বিপত্তি চালকের

এই পরিস্থিতিতে বৃহন্নলাদের সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

২ নম্বর জাতীয় সড়কে বাঁশকোপা টোলপ্লাজায় ট্রাক থামলেই হাজির ওঁরা। অভিযোগ, জোর করে টাকা আদায় যেমন করা হচ্ছে, তেমনই টাকা না পেলে চালকদের গালিগালাজ করছেন এক দল বৃহন্নলা। যদিও এ ভাবে টাকা আদায়কারীরা আদৌ বৃহন্নলা কি না, তা নিয়েও সংশয়ে চালকেরা। এই পরিস্থিতিতে বৃহন্নলাদের সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

চালকদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে টোলপ্লাজায় গেলেই দেখা মেলে পাঁচ জন ‘বৃহন্নলা’র। দেখা যায়, ট্রাক থামলেই তাঁরা ছুটে আসছেন ট্রাক চালকদের দিকে। নানা কথায় একটাই দাবি, ‘টাকা দাও।’ চালকদের একাংশ জানান, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অনেক সময়েই তাঁরা টাকা দিয়ে দেন। কিম্তু কোনও চালক বেঁকে বসলেই সমস্যার শুরু। সম্প্রতি ওই দলটির সামনে পড়া টাকা দিতে নারাজ কয়েক জন চালক জানান, টাকা না দিলেই শুরু হয় গালিগালাজ। আরও অভিযোগ, সম্প্রতি রাস্তার নানা অংশে গাড়ি আটকে টাকা তুলতে দেখা যায় বৃহন্নলাদের। কিন্তু টোলপ্লাজায় এমন ‘উপদ্রব’ গত কয়েক দিনের।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে টোলপ্লাজার নিরাপত্তা নিয়েও। ট্রাক চালক সুনীল মাঝির ক্ষোভ, ‘‘টোলপ্লাজায় নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। টহলদার পুলিশকর্মীদের নজরে পড়ে। তার পরেও বৃহন্নলারা এমন ‘কারবার’ চালিয়ে যাচ্ছেন।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণ ভাবে, রাতের দিকে এক এক সময় টোলপ্লাজায় ট্রাকের লাইন লেগে যায়। সেই ‘সুযোগ’টাই কাজে লাগান বৃহন্নলারা। গভীর রাত পর্যন্ত টাকা আদায়ের পরে তাঁরা বর্ধমানের দিকে চলে যায়। পুলিশ অবশ্য জানায়, টাকা তুলতে দেখলেই বৃহন্নলাদের নিষেধ করা হয়। যদিও ওই বৃহন্নলাদের দাবি, তাঁরা জোর করে টাকা নেন না বা টাকা না দিলে গালিগালাজও করেন না। তাঁরা আর্থিক সাহায্য চান। তবে সঞ্জয় পাসোয়ান নামে এক ট্রাক চালকের দাবি, ‘‘ওই বৃহন্নলাদের আদৌ টাকার দরকার রয়েছে বলে মনে হয় না। হাতে অত্যন্ত দামী স্মার্ট ফোন থাকে।’’

এই অভিযোগ সামনে আসার পরে অন্য একটি সংশয়ের কথাও জানিয়েছেন ট্রাক চালকেরা। তাঁদের একাংশের সংশয়, অনেক সময়েই মনে হয় ওই ‘বৃহন্নলা’রা আসলে বৃহন্নলাই নন। রাজ্যের রূপান্তরকামী ও বৃহন্নলাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলা একটি সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক রঞ্জিতা সিংহও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের ‘ট্রান্সজেন্ডার ওয়েলফেয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’-এর সদস্য রঞ্জিতা বলেন, ‘‘বৃহন্নলার বেশে অনেকেই অসাধু উপায়ে রোজগারের পথ নিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের উপরে জোরজুলুম করছেন। এটা বন্ধ করা দরকার। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’’

সেই সঙ্গে এমন সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে রঞ্জিতার আর্জি, বৃহন্নলাদের সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়া ব্যবস্থা করুক সরকার। তবেই স্বচ্ছতা আসবে। এ ছাড়া তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলার ব্যবস্থাও নিতে হবে সরকারকে। তা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন রঞ্জিতা। পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের পরামর্শমতোই কাজ করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Truck Transgender NH2
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE