Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধা খুনে ধৃত দুই, নস্যি প্যান্ট ঘিরে রহস্য

গোপীনাথের মেলা চলাকালীনই বিরাশি বছরের বৃদ্ধাকে খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার হল দু’জন। শুক্রবার বিকালে নদিয়ার চাপড়া থেকে ওই দু’জনকে ধরে কাটোয়া থানার পুলিশ। ধৃত ধুলু শেখ ও সফিকুল মোল্লা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। তাদের বাড়ি চাপড়া থানার বন্যেডাঙার তালুকহুদা গ্রামে। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “আমাদের প্রাথমিক ধারণা, ওই বৃদ্ধার সঙ্গে ঘোড়া রাখা নিয়ে অশান্তি হয়েছিল ধৃতদের। তার জেরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে।”

মোমবাতি জ্বেলে প্রতিবাদ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

মোমবাতি জ্বেলে প্রতিবাদ। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০২:২৭
Share: Save:

গোপীনাথের মেলা চলাকালীনই বিরাশি বছরের বৃদ্ধাকে খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার হল দু’জন। শুক্রবার বিকালে নদিয়ার চাপড়া থেকে ওই দু’জনকে ধরে কাটোয়া থানার পুলিশ। ধৃত ধুলু শেখ ও সফিকুল মোল্লা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। তাদের বাড়ি চাপড়া থানার বন্যেডাঙার তালুকহুদা গ্রামে। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “আমাদের প্রাথমিক ধারণা, ওই বৃদ্ধার সঙ্গে ঘোড়া রাখা নিয়ে অশান্তি হয়েছিল ধৃতদের। তার জেরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে।”

গত বুধবার, মেলার শেষ দিন সকালে বাড়ির শৌচাগারের কাছে নগ্ন অবস্থায় চিত হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় ওই বৃদ্ধার দেহ মেলে। তাঁর পরিজনরা অভিযোগ করেন, বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে থেঁতলে খুন করা হয়েছে। তাঁর বাড়িতে বসা আখড়ার লোকজনের বিরুদ্ধে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। তাঁরাই আখড়ার মালিক-সহ সাতজনকে আটকে রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেন। যদিও প্রাথমিক ভাবে মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানায়। আটকদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ, বাকিদের উপর নজর রাখে।

পুলিশ জানায়, তদন্তের সময় কালনার সিআই রাকেশ শর্মার কাছে অগ্রদ্বীপের গ্রামের বধূ আদুরি ঘোষ জানিয়েছিলেন, গোপীনাথ মেলার অন্ন মহোত্‌সবের দিন দুপুরে চরণ পালের আখড়ায় পুজো দেখতে এসে তিনি দেখতে পান, ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কয়েকজন ঘোড়া চালকের গোলমাল হচ্ছে। পুলিশের কাছে আদুরিদেবী দাবি করেন, ওই বৃদ্ধার জায়গাতে ঘোড়া রাখা নিয়েই ওই দিন অশান্তি হয়েছিল। পরে কাটোয়া থানার ওসি জুলফিকার আলি জানতে পারেন, ঘটনার পরেই বুধবার ভোর রাতে অগ্রদ্বীপ গ্রাম থেকে ঘোড়া নিয়ে চলে যান কয়েকজন চালক। পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। কাটোয়া থানায় আটক থাকা তিনজন ঘোড়া চালককে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী অফিসার। জিজ্ঞাসাবাদে আদুরিদেবীর বক্তব্যের সত্যতা পেলে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে।

এরপরে বৃহস্পতিবার রাতেই কাটোয়া থানার ওসি জুলফিকারের নেতৃত্বে পুলিশ চাপড়া থানায় যায়। সেখানকার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তালুকহুদা গ্রাম থেকে ওই দুই ঘোড়া চালককে আটক করে কাটোয়া থানায় আনা হয়। তদন্তকারী অফিসার ওই দু’জনের ছবি তুলে অগ্রদ্বীপ গ্রামে যান। সেখানে বিভিন্ন জনের কথা বলার পর নিশ্চিত হন যে, বৃদ্ধার সঙ্গে ওই দুই ঘোড়া চালকের অশান্তি হয়েছিল। পুলিশও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রচুর তথ্যও পায়। যা দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, এই দুই ঘোড়া চালকই বিরাশি বছরের ওই বৃদ্ধাকে খুন করেছে। এরপরেই সন্ধ্যায় ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধাকে ঘুম থেকে তুলে প্রথমে শৌচাগারের কাছে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁর মুখে ঘুষি মারে ধৃতেরা। বৃদ্ধা পড়ে গেলে তাঁকে টানতে টানতে কলাগাছের তলায় নিয়ে গিয়ে ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়। তবে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা নস্যি রঙের ফুল প্যান্ট রহস্যের সমাধান এখনও পুলিশ করতে পারেনি। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমাদের ধারণা আরও কয়েকজন এই ঘটনায় জড়িয়ে রয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।” এ দিন সন্ধ্যার কাটোয়ায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মোমবাতি মিছিল করে মহিলা কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE