Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মায়ের দেহ পড়ে রইল পাঁচ ঘণ্টা, পাশে বসে কেঁদে যাচ্ছিল দুই খুদে

সকাল থেকেই কখনও রেলপাড়, কখনও পুকুর পাড়ে বসে কান্নাকাটি করছিল শিশুদুটি। মৃত মা তখনও পড়ে রয়েছেন লাইন পাড়ের ঝুপড়ি ঘরে।

রেলস্টেশনের পাশের ঝুপড়িতে বসে দুই খুদে। নিজস্ব চিত্র

রেলস্টেশনের পাশের ঝুপড়িতে বসে দুই খুদে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০৫:১৮
Share: Save:

সকাল থেকেই কখনও রেলপাড়, কখনও পুকুর পাড়ে বসে কান্নাকাটি করছিল শিশুদুটি। মৃত মা তখনও পড়ে রয়েছেন লাইন পাড়ের ঝুপড়ি ঘরে। পরিস্থিতি দেখে রেলপুলিশের খবর দেন আশপাশের বাসিন্দারা। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ আসেনি। ঘণ্টা পাঁচেক পরে পড়শিরাই ওই মহিলার স্বামীকে ডেকে দেহ তুলে দেন তাঁর হাতে।

সোমবার কাটোয়া রেলস্টেশন লাগোয়া ঝুপড়ির ঘটনায় রেলপুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মায়ের দেহের সামনে অসহায় এতক্ষণ বসে থাকা দুই শিশুর মনে কী প্রভাব ফেলবে, সে প্রশ্নও উঠেছে। কাটোয়া জিআরপি-র যদিও দাবি, মহিলার পরিজনেরা সময়ে না আসায় ও সৎকারের ব্যবস্থা না করায় দেরি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেল স্টেশনের সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে পুকুরের ধারে বছরক পাঁচেকের মেয়ে মামণি ও দেড় বছরের ছেলে বিশুকে নিয়ে থাকতেন পাগলি মান্ডি (৩৫)। এ দিন সকালে ঝুপড়িতেই কাপড় চাপা দেওয়া অবস্থায় তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। মামণি ও বিশু ঘোরাঘুরি করছিল পাশেই। কখনও পুকুর পাড়ে, কখনও রেললাইনে বসেও কান্নাকাটি করতে দেখা যায় তাদের। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রেলপুলিশে খবর দেওয়া হলেও মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ করেনি পুলিশ। ঘণ্টা পাঁচেক পরে বেলা ১১টা নাগাদ স্থানীয়রাই মৃতার স্বামী দেবীলাল মান্ডিকে ডেকে আনেন। জানা যায়, মদ্যপ দেবীলাল ওই ঝুপড়িতে থাকতেন না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে একাই থাকতেন ওই মহিলা। স্টেশনে কাগজ, প্লাস্টিক কুড়িয়ে দিন গুজরান করতেন তিনি। এ দিন দুপুরে জাজিগ্রামে মৃতার আত্মীয়দেরও খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দেহ সৎকারের ব্যবস্থাও করেন তাঁরা।

প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া ব্যবসায়ী মিঠুন শেখ, বিমল মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘বাচ্চাগুলোর কান্না দেখে দেবীলালকে খুঁজে আনা হয়। ওদের মুখ চেয়েই সৎকারের উদ্যোগ করি।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্বাসকষ্ট নিয়ে দিন তিনেক আগে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ওই মহিলা। এ দিন দুপুরে তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রও দেন স্থানীয় এক চিকিৎসক। এরপরেই তাঁর দেহ আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দেহ উদ্ধরে এত সময় লাগল কেন? জিআরপির তরফে জানানো হয়েছে, মহিলার মৃত্যু স্বাভাবিক হওয়ায় পরিজনদের খবর দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা সময়ে এসে না পৌঁছনোয় ও সৎকারে ব্যবস্থা না করায় দেহ পড়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Children Dead Body GRP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE