Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নতুন মাঠে রেকর্ড ধরে রাখতে মরিয়া দু’দলের সেনাপতি

এক জনের লড়াই কুর্সি ফিরে পাওয়ার। আর এক জনের তা ধরে রাখার। মিল অবশ্য একটা আছে— লড়াইটা এ বার দু’জনেই লড়ছেন অচেনা মাঠে নেমে। কালনার এক সময়ের পুরপ্রধান সিপিএমের গৌরাঙ্গ গোস্বামী ও তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু— সংরক্ষণের গেরোয় দু’জনকেই এ বার নিজেদের পুরনো ওয়ার্ড ছেড়ে প্রার্থী হতে হয়েছে অন্য ওয়ার্ড থেকে। ৭ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে টানা চার বার জেতা গৌরাঙ্গবাবু দাঁড়িয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে।

বাঁ দিকে, গৌরাঙ্গ গোস্বামী। ডান দিকে, বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, গৌরাঙ্গ গোস্বামী। ডান দিকে, বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৪
Share: Save:

এক জনের লড়াই কুর্সি ফিরে পাওয়ার। আর এক জনের তা ধরে রাখার।

মিল অবশ্য একটা আছে— লড়াইটা এ বার দু’জনেই লড়ছেন অচেনা মাঠে নেমে।

কালনার এক সময়ের পুরপ্রধান সিপিএমের গৌরাঙ্গ গোস্বামী ও তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু— সংরক্ষণের গেরোয় দু’জনকেই এ বার নিজেদের পুরনো ওয়ার্ড ছেড়ে প্রার্থী হতে হয়েছে অন্য ওয়ার্ড থেকে। ৭ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে টানা চার বার জেতা গৌরাঙ্গবাবু দাঁড়িয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। আবার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের গত দু’বারের জয়ী প্রার্থী বিশ্বজিৎবাবু এ বার লড়ছেন গৌরাঙ্গবাবুর পুরনো ওয়ার্ড ৭ নম্বরে। কারণ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটি এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। ময়দান পাল্টে গেলেও দু’পক্ষের দুই সারথিই আত্মবিশ্বাসি, তাঁদের জেতা আটকাবে না।

পেশায় চিকিৎসক গৌরাঙ্গবাবু ১৯৯৫ সাল থেকে জিতে এসেছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। শুধু তিনি নন, তার আগে তাঁর বাবা বিশ্বম্ভর গোস্বামীও এই ওয়ার্ড থেকে দু’বার জিতছিলেন। অর্থাৎ, কালনা শহরের এই ওয়ার্ড গোস্বামী পরিবারের একেবারে খাসতালুক। তবে এ বার অন্য এলাকায় প্রার্থী হতে হলেও সে নিয়ে চিন্তিত নয় গৌরাঙ্গবাবুর দল। সিপিএম নেতাদের দাবি, ২০০০ থেকে ২০১০ পর্য়ন্ত কালনার পুরপ্রধান ছিলেন গৌরাঙ্গবাবু। তাই গোটা শহর তাঁকে খুব ভাল ভাবে চেনে। গৌরাঙ্গবাবুও বলছেন, ‘‘প্রচারে নেমে ভাল সাড়া মিলছে। কারণ, শহরের প্রায় সব উন্নয়ন হয়েছে বাম আমলে। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পরিচালিত পুরসভা কোনও কাজ করেনি।’’

সিপিএম প্রার্থী এ কথা বললেও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লড়াইটা খুব একটা সহজ নয়। কারণ, সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে আসা আনন্দ দত্ত, যিনি টানা প্রায় দু’দশক এই ওয়ার্ডে জিতে আসছেন। গত বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরসভা দখল করার পরে জল ও আলো বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছিলেন আনন্দবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘দল পাল্টালেও আমার জয়ের ধারা পাল্টাবে না। বিরোধী প্রার্থী তো ওয়ার্ডটাই ভাল ভাবে চেনেন না।’’ এ ছাড়াও এই ওয়ার্ডে লড়ছেন নির্দল হিসেবে দাঁড়ানো স্থানীয় তৃণমূল নেতা গোপাল তিওয়ারি। প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি-ও। টক্কর যে বেশ জোর, এলাকায় পতাকা, ফেস্টুন, দেওয়াল লিখনের দাপট দেখলেই মালুম হয়।

শহরের বিদায়ী পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দু’বারই বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন। এ বার তিনি দাঁড়িয়েছেন গৌরাঙ্গবাবুর খাসতালুক থেকে। তৃণমূল বা সিপিএমের পাশাপাশি এখানে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। গোস্বামী পরিবারের একাধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া সিপিএম এ বার এখানে প্রার্থী করেছে অলোক সাহাকে। তাঁর হয়ে প্রচার করেছেন গৌরাঙ্গবাবুও। সিপিএমের কালনা জোনাল সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘৭ নম্বর ওয়ার্ড এ বারও প্রথা ভেঙে বেরোবে না, সে আভাস আমরা প্রচারেই নেমেই পাচ্ছি।’’

তৃণমূলের একটি সূত্রের আবার খবর, বিশ্বজিৎবাবুকে এই ওয়ার্ডে এসে লড়তে হচ্ছে দলের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গেও। বিশ্বজিৎবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে চার দশক ধরে গোস্বামী পরিবারের আধিপত্য রয়েছে। তবে এ বার তা ভেঙে যাবে। কারণ, গত পাঁচ বছরে পুরসভায় প্রচুর উন্নয়ন করেছি। তাই জেতার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE