Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জাতীয় সড়কে ট্রাকে গাড়ির ধাক্কা, মৃত দুই

পুলিশ এসে নিথর দেহ দু’টি বার করে ময়না-তদন্তের জন্যে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

এই ট্রাকেই ধাক্কা দেয় গাড়িটি। বর্ধমানের বেচারহাটে। নিজস্ব চিত্র

এই ট্রাকেই ধাক্কা দেয় গাড়িটি। বর্ধমানের বেচারহাটে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৮
Share: Save:

জাতীয় সড়ক থেকে কিছুটা দূরে মোরামের উপরে বাঁ দিক ঘেষে দাঁড়িয়েছিল পাথর বোঝাই ট্রাক। আচমকা পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে কলকাতামুখী একটি গাড়ি। দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়ির সামনের অংশ। বিকট আওয়াজ শুনে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ীরা গিয়ে দেখেন, চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে গাড়ির ভিতরে থাকা দু’জনের দেহ। পরে পুলিশ এসে নিথর দেহ দু’টি বার করে ময়না-তদন্তের জন্যে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

সোমবার বেলা সওয়া ১০টা নাগাদ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে বর্ধমানের বেচারহাটের বড়নীলপুর মোড়ের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই গাড়ির চালক নিতাই হাজরার (৩৫) বাড়ি দুর্গাপুরের এমএএমসি এলাকায়। আর চালকের পাশে বসে কলকাতায় কাজে যাচ্ছিলেন দুর্গাপুরের অম্বুজা সিটি সেন্টারের অম্বুজা কলোনির পিন্টুকুমার পান (৩৯)। পিন্টুবাবু পেশায় ঠিকাদার। তাঁর বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী রূম্পাদেবী, তাঁদের দুই সন্তান অভিজিৎ ও ঐশ্বর্য। পরিজনেরা জানান, নিয়মিত নিজের গাড়িতেই কলকাতায় যাতায়াত করেন তিনি। এ দিনও সকালে রাজারহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। অভিজিৎবাবুর পড়শি সুমনেশ রায়, কুন্দনকুমার চৌধুরীদের দাবি, “বাড়ির লোকজনকে পুরোপুরি জানানো হয়নি। দু’টি শিশুর সামনে কী ভাবে ঘটনার কথা জানানো হবে, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

কী ভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল, তা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যেই ভিন্ন মত রয়েছে। পুলিশের দাবি, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন চালক। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি ধাক্কা মারে ট্রাকটিতে। এতটা জোরেই ধাক্কা লাগে যে, ট্রাকের পিছনে থাকা ‘বার’টিও ভেঙে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানান, যাত্রিবাহী গাড়িটি দ্রুত গতিতে আসছিল। হঠাৎ দেখা যায়, গাড়িটি বাঁ দিকে এসে সোজা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে। সম্ভবত যান্ত্রিক গোলোযোগে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তাঁদের দাবি। সামনের চাকা ফেটে যাওয়ায় চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি বলেও জানান কয়েকজন। মৃতের পরিজনদের আবার দাবি, লেন ভেঙে আর একটি ট্রাক ঢুকছিল। সেটিকে পাশ কাটাতে গিয়েই দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারেন চালক। স্থানীয় প্রতিমা মাঝি, যুবক শ্রীধর কোলেদের দাবি, “বাড়ির ছাদ থেকে ওই দৃশ্য দেখে আমরা সবাই বেরিয়ে পড়েছিলাম। কেউ কেউ বালতি করে জলও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু গিয়ে দেখি দু’জনেই মারা গিয়েছেন।’’

প্রত্যক্ষদর্শীদের ক্ষোভ, পাথরবোঝাই লরিটি প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে চাকা ফেটে ও যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য ওই এলাকায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুলিশ উদ্যোগী না হওয়ায় গত কয়েক দিনে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনার পরেই এলাকায় যান ডিএসপি (বর্ধমান সদর) শৌভিক পাত্র-সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। প্রাথমিক তদন্তের পরে তাঁরা জানিয়েছেন, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তার ধারে চিহ্নিত করা এলাকার বাইরে মোরামের উপরে গাড়িটি দাঁড়িয়েছিল। যে ভাবে গাড়িটি দ্রুত গতিতে ধাক্কা মেরেছে তাতে চালকের নিয়ন্ত্রণ ছিল না বলেই মনে হচ্ছে। শৌভিকবাবু জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur National Highway Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE