Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বস্তিতে বৃষ্টির জল ধরে ব্যবহারের প্রকল্প দুই শিক্ষকের

আসানসোল পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বস্তিতে সংরক্ষণ করে রাখা বৃষ্টির জলে জামাকাপড় ধোয়া,  বাসন মাজা, স্নান সারছেন বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও শোধন করে কাজে লাগানোয় জলকষ্ট থেকে রেহাই মিলেছে তাঁদের।

আসানসোলের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জল প্রকল্প পর্যবেক্ষণে শিক্ষকেরা। ছবি: পাপন চৌধুরী

আসানসোলের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জল প্রকল্প পর্যবেক্ষণে শিক্ষকেরা। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প আসানসোল পুরসভা এলাকায় সে ভাবে নজরে পড়েনি, অভিযোগ শহরবাসীর অনেকেরই। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে নেমে পড়েছেন আসানসোলের এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষক। নিজেদের খরচে আসানসোলের পলাশডিহার একটি বস্তিতে তাঁরা তৈরি করেছেন বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্প। তাতে উপকৃত হচ্ছেন এলাকার শতাধিক বাসিন্দা।

আসানসোল পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বস্তিতে সংরক্ষণ করে রাখা বৃষ্টির জলে জামাকাপড় ধোয়া, বাসন মাজা, স্নান সারছেন বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও শোধন করে কাজে লাগানোয় জলকষ্ট থেকে রেহাই মিলেছে তাঁদের। কী ভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি রূপায়ণ করা হয়েছে, তা দেখালেন ওই দুই শিক্ষক অভিজিৎ দেবনাথ ও চন্দ্রশেখর কুণ্ডু। জল ধরার জন্য একটি অ্যাসবেস্টসের চাল দেওয়া বাড়ির লম্বা ছাদের চার পাশে ইট দিয়ে চার ইঞ্চি উঁচু করা হয়েছে। ছাদের ঢালু অংশে অ্যাসবেস্টসের ধার ঘেঁষে পাইপ বসিয়ে তার মাধ্যমে বৃষ্টির জল খানিকটা দূরে রাখা বড় ড্রামে পাঠানো হচ্ছে। ওই ড্রামেই রাখা নুড়ি পাথর, মোটা বালি ও মিহি বালির পরপর স্তরে জল শোধন হচ্ছে। তার পরে সেই জল ছাঁকনির সাহায্যে পাশের ড্রামে পাঠানো হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াই হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় ভাবে।

অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘বৃষ্টির জল এমনিতেই পরিশুদ্ধ। তার উপরে আরও তিনটি স্তরে পরিশোধন করায় পান করাও যেতে পারে। তবে আমরা বাসিন্দাদের এই জলে ধোয়া, মাজা, স্নানের পরামর্শ দিয়েছি।’’ জল পেয়ে খুশি বাসিন্দারাও। সনকা ভুঁইয়া, বাঘা ভুঁইয়া, অমিত ভুঁইয়ারা জানান, পাড়ায় প্রায় ২৫টি পরিবারের বাস। পুরসভার কলে সারা দিনে শুধু বিকেলে জল মেলে। পাড়ার পুরুষ-মহিলা সকলেই দিনমজুর। সকালে কাজে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফেরেন। ফলে, বেশি জল ধরে রাখতে পারেন না তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘বৃষ্টির জল ধরে রেখে ব্যবহার করার ব্যবস্থা হওয়ায় জলকষ্ট থেকে বেঁচেছি।’’

হঠাৎ এমন ভাবনা কেন? বস্তি অঞ্চলে শিশুদের জন্য পড়াশোনা ও খাবারের বন্দোবস্ত করার কর্মসূচিতে যুক্ত শিক্ষক চন্দ্রশেখরবাবু জানান, এই বস্তিতে কাজ করার সময়ে জলকষ্ট দেখে অভিজিৎবাবুর সঙ্গে সে নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তার পরেই তাঁরা এই কাজে নামেন। তাঁরা জানান, শতাধিক বাসিন্দার জন্য এই প্রকল্প তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় আট হাজার টাকা। এই প্রকল্পের কথা পুরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে অন্য গ্রাম ও বস্তি অঞ্চলে রূপায়ণের আবেদন করবেন, জানান দুই শিক্ষক।

এই পরিকল্পনা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলব।’’ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পুরসভার সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সুকোমল মণ্ডলও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Crisis Rain Water Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE