তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
এক তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শনিবার তেতে উঠল দুর্গাপুরের রায়ডাঙা এলাকা। তরুণীর পরিচিত এক যুবক ও এক আত্মীয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। পুলিশ তাঁদের আটক করেছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত জানান, কী ভাবে তরুণীর মৃত্যু হল তা ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পেলেই পরিষ্কার হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজল মুরারি (২০) নামে ওই তরুণীর বাড়ি মুর্শিদাবাদে। মাস দেড়েক আগে নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী বিক্রির একটি সংস্থার ‘নেটওয়ার্কিং’-এর কাজে তিনি দুর্গাপুরে আসেন। তাঁর মামা আগে থেকে এই ব্যবসায় যুক্ত। একই কাজে নিযুক্ত আরও তিন তরুণীর সঙ্গে রায়ডাঙায় একটি বাড়িতে ভাড়া ছিলেন কাজল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে অন্য তরুণীরা কাজে গেলেও কাজল যাননি। তাঁর ঊর্ধ্বতন সহকর্মী এক যুবক খোঁজ নিতে আসেন। তাঁর দাবি, কাজলকে ঘরে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। একটি টোটো ভাড়া করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ফোনে খবর দেন কাজলের মামাকেও। তিনিও এসে পৌঁছন। কিন্তু হাসপাতালের পথেই মৃত্যু হয় কাজলের। এর পরে তাঁরা দেহ ভাড়াবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তখনই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের আটক করে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ।
বাড়ির মালিক সুনিধি সরকার জানান, বছরখানেক ধরে ভাড়ায় রয়েছেন তিন তরুণী। মাসখানেক আগে কাজল আসেন। সকাল ৬টার মধ্যে তাঁরা কর্মস্থলে চলে যান। শনিবার সুনিধিদেবী বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে কাজলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন ঠিক ছিল। আজ সকাল ৭টা নাগাদ ওই যুবক এসে জানান, কাজল অসুস্থ। আমি ঘরে গিয়ে দেখি, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সে পড়ে রয়েছে।’’ তিনি জানান, এর পরেই টোটোয় কাজলকে নিয়ে হাসপাতালে যান ওই যুবক। ঘণ্টা দুয়েক পরে কাজলের দেহ নিয়ে ফিরে আসেন। সঙ্গে আর এক জন ছিলেন। খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন এসে ওই দু’জনকে আটকে রাখেন।
যে টোটোয় কাজলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটির চালক সনাতন মুদি জানান, প্রথমে একটি নার্সিংহোমে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক না থাকায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কিছুক্ষণ পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ফেরার রাস্তা ধরেন ওঁরা। মাঝরাস্তায় টোটো দাঁড় করিয়ে কিছুক্ষণ ফোনেও কথা বলেন।’’ কাজলের সঙ্গে থাকতেন সহকর্মী মায়নো টুডু। তাঁর দাবি, ‘‘সকালে কাজে বেরনোর সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম, বেরোবে কি না। বলেছিল, শরীর ভাল নেই। পরে শুনি এই ঘটনা।’’
স্থানীয় বাসিন্দা মিলন নাগের অভিযোগ, ‘‘যখন টোটো থেকে মেয়েটিকে নামানো হয় তখন শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সে নিয়ে আমরা ধন্দে রয়েছি।’’ আর এক বাসিন্দা দীপঙ্কর হালদারের অভিযোগ, ‘‘নেটওয়ার্কিং ব্যবসার নামে কী হচ্ছে আমরা জানি না। কয়েকদিন আগে শ্যামপুরে এমনই এক সংস্থার কাজকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বাসিন্দাদের উপরে চড়াও হয়েছিল বহিরাগত লোকজন। অবিলম্বে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে তদন্তে যান এসিপি (পূর্ব) আরিশ বিলাল। দেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। আটক দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy