Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পরিকল্পনার অভাবেই ভোগান্তি

বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলেই এমনটা। নিকাশি-ব্যবস্থার কথা না ভেবে একের পর এক বহুতলের অনুমোদন দিয়েছে পুরসভা।

বর্ষায় এমনই হাল হয় দুর্গাপুরের নানা এলাকায়। ফাইল চিত্র

বর্ষায় এমনই হাল হয় দুর্গাপুরের নানা এলাকায়। ফাইল চিত্র

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনার অভাব। নর্দমায় বাড়ির আবর্জনা ফেলার ‘বদ-অভ্যাস’। মূলত এই জোড়া কারণেই ফি বছর বর্ষায় দুর্গাপুরে জমা জলের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে বলে মনে করছেন নাগরিকদের একাংশ।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে দুর্গাপুরে বহু বেসরকারি কারখানা, শপিং মল, হোটেল, মাল্টিপ্লেক্স, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ তৈরি হতে শুরু করে। বাড়তে থাকে জনসংখ্যা, নতুন বসতি, বহুতল আবাসনের সংখ্যাও। অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে বহু এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে ধান্ডাবাগ, লিঙ্ক রোড, মেন গেট, কাদা রোড, বেনাচিতির শ্রীনগরপল্লির মতো নানা জায়গা বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পুরসভার প্রায় ১০টি ওয়ার্ডের নানা জায়গায় একটু বেশি বৃষ্টিতেই জল জমে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের। এমনকি জাতীয় সড়ক প্লাবিত হওয়া, জলের স্রোতে ভেসে গিয়ে বা জলে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু, এমন ঘটনাও ঘটেছে নানা বছরে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলেই এমনটা। নিকাশি-ব্যবস্থার কথা না ভেবে একের পর এক বহুতলের অনুমোদন দিয়েছে পুরসভা। বহু জায়গায় নর্দমার উপরেই বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয়েছে! বড় নর্দমাগুলির পাড় দখল করে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের মদতে বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

তবে শুধু পুরসভা বা প্রশাসন নয়, এই পরিস্থিতির জন্য জন-সচেতনতার অভাবকেও দায়ী করছেন নাগরিকদের একাংশ। তাঁদের মতে, অনেকেই বাড়ির আবর্জনা ডাস্টবিন বা পুরসভার গাড়িতে না ফেলে নর্দমায় ফেলেন। ফলে নালা বুজে সমস্যা হয়। বর্ষায় ডোবে পথঘাট। জল ঢোকে বাড়িতে। নলকূপও চলে যায় জলের তলায়।

যদিও পুরসভার দাবি, সমস্যার সমাধানে গত বছর থেকে জোরকদমে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বড় নর্দমায় যন্ত্র নামিয়ে পলি তোলা, নর্দমার আশপাশের আগাছা সাফ, পাড় কাটা-সহ নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে পুরসভা জানায়। পাশাপাশি, নতুন নর্দমা তৈরি, সরু নর্দমা ভেঙে চওড়া করা হয়েছে।

শহরের নর্দমা বা খালের জল সবশেষে গিয়ে পড়ে শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া তামলা নালায়। পরে তা পড়ে দামোদরে। সংস্কার না হওয়া ও দু’পাড় জবরদখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ তামলা সরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা যায়। এই পরিস্থিতিতে জল দ্রুত বয়ে যেতে পারে না। দু’পাড় প্লাবিত হয়। সেচ দফতর অবশ্য জানায়, কয়েক মাস আগে তামলা নালা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ভাগে নালাটির ২০ কিলোমিটার অংশের সংস্কারের কাজ চলছে। দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘বর্ষায় বা বৃষ্টিতে শহর যাতে জলমগ্ন না হয়, সে জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা। তাই সমাধান হতে সময় লাগছে। পরিকল্পিত ভাবে কাজ করা হচ্ছে। আশা করা যায় দ্রুত জল জমা থেকে রেহাই মিলবে।’’

পুরকর্তাদের একাংশের অবশ্য দাবি, বহু পদক্ষেপ করা হলেও সমস্যা বাড়াচ্ছে প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রবণতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Water Logging Drainage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE