Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রসূতির মৃত্যুতে মার নার্স-রক্ষীকে, ভাঙচুর

প্রসূতি বিভাগে ভাঙচুর, দুই নার্স ও এক নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মৃতের পরিজনদের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন বলে জানান হাসপাতালের কর্মীরা।

নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন, অভিযোগ কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন, অভিযোগ কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১০
Share: Save:

এক প্রসূতির মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে অশান্তি বাধল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। প্রসূতি বিভাগে ভাঙচুর, দুই নার্স ও এক নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মৃতের পরিজনদের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন বলে জানান হাসপাতালের কর্মীরা।

সোমবার রাত ১টা নাগাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কাটোয়ার পেঁকুয়ার বাসিন্দা রোশনি বিবিকে (২০)। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আচমকা রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ রোশনিকে হাসপাতালে দেখতে আসেন তাঁর মা হাসিনা বিবি। তখনই তাঁকে জানানো হয়, প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর গর্ভস্থ সন্তানেরও মৃত্যু হয়েছে।

হাসিনা বিবির অভিযোগ, ‘‘সোমবার রাতেই দু’বোতল রক্ত লাগবে বলা হয়েছিল। তা এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু স্যালাইন, রক্ত কিছুই দেওয়া হয়নি। এমনকি, মেয়ে জল খেতে চাইলেও দেয়নি নার্স এবং আয়ারা।’’ পরিবারের অভিযোগ, অবস্থার অবনতি হলেও রোশনিকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। সকালে মেয়েকে হাসপাতালে দেখতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বলেও তাদের দাবি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোগীকে দেখতে ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় নথি ছিল না হাসিনা বিবির কাছে। তা সত্ত্বেও তিনি জোর করে দোতলার প্রসূতি বিভাগে ঢুকতে চাওয়ায় বাধা দেন কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী শুভঙ্কর ঘোষ। শুভঙ্করের অভিযোগ, ‘‘মহিলা কয়েকজন যুবককে নিয়ে জোর করে ঢুকতে চাইছিলেন। বাধা দেওয়ায় আমার গলা টিপে ভিতরে ঢোকে। লেবার রুমের দরজায় ধাক্কা দেয়, চেয়ার-টেবিলও উল্টে দেয়।’’ ওই বিভাগে কর্তব্যরত দুই নার্স মুনমুন মহান্তি ও মৌমিতা চট্টোপাধ্যায়কেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের কথায়, ‘‘লেবার রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল। ধাক্কা দিকে ভিতরে ঢুকে আমাদের উপরে চড়াও হয় রোগীর পরিজনেরা। চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে।’’ এক আয়াকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

হুজ্জুতির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রসূতির পিসি, জামাইপাড়ার বাসিন্দা নুরবানু বিবি দাবি করেন, ‘‘নার্স-আয়াদের গাফিলতিতে মেয়েটা মারা গেল। ওরা মেয়ের মুখটাও দেখতে দিচ্ছিল না। উল্টে, আমাদের ক্ষমা চাইতে বলে!’’ দিনভর মৃতার দেহ প্রসূতি বিভাগেই ছিল। বিকেলে ময়না-তদন্ত হয়।

হাসপাতালের সুপার রতন শাসমল বলেন, ‘‘প্রসূতির ক্ষত ছিল। সেখান থেকে রক্তপাত হচ্ছিল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হয়। রক্তও দেওয়া হয়। কিন্তু সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক বোঝানোর পরেও রোগীর পরিজনেরা দলবল নিয়ে এসে হামলা করে।’’ রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে কাটোয়া থানায় অভিযোগ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নার্সদের ক্ষোভ, ‘‘এমন নিরপত্তাহীন পরিস্থিতিতে পরিষেবা দেব কী ভাবে!’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE