ধর্মঘটের সমর্থনে আসানসোলে পথে নামল সিপিএম।
ধর্মঘট নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই অশান্ত হয়ে উঠল খনি-শিল্পাঞ্চল।
ধর্মঘটের সমর্থনে পোস্টার সাঁটানোয় সিপিএম ও তার শাখা সংগঠনের কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে। রানিগঞ্জে আবার তৃণমূলের পথসভায় চড়াও হওয়ার আঙুল উঠেছে সিপিএমের দিকে। দু’টি ঘটনাতেই কয়েক জন আহত হয়েছেন।
বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ রানিগঞ্জের নেতাজি সুভাষ মূর্তির সামনে ধর্মঘটের বিরোধিতায় পথসভা করছিল তৃণমূল। ছিলেন দলের রানিগঞ্জ আশরাফ খান, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরের ডলফিন মাঠ থেকে প্রায় একই সময়ে সিপিএমের একটি মিছিল শুরু হয়েছিল ধর্মঘটের সমর্থনে। সেই মিছিল তৃণমূলের পথসভার দিকে এগিয়ে আসছিল। অভিযোগ, সেই সময়ে পথসভায় হাজির কয়েক জন কর্মী মিছিলের উদ্দেশে নানা রকম কটূক্তি করে। মিছিল থেকে তার পাল্টা প্রতিবাদ করা হয়। এর পরেই দু’পক্ষের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলার মুখে পড়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। বেধড়ক মারধর করা হয় কয়েক জনকে। রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি অভিযোগ করেন, সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। তাঁরা রানিগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, তাদের তিন জন নেতা-কর্মী জখম হয়েছেন।
সিপিএমের রানিগঞ্জ জোনাল সম্পাদক রুনু দত্ত আবার অভিযোগ করেন, তাঁরা মিছিল করছিলেন। ছিলেন বংশগোপালবাবু, পুরপ্রধান অনুপ মিত্রেরা। নেতাজি সুভাষ মূর্তির সামনে পৌঁছতেই তাঁদের মিছিল আটকানোর চেষ্টা করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বাধা দিতে গিয়ে অনুপবাবু এবং দলের চার মহিলা কর্মী-সহ পাঁচ জন প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে রানিগঞ্জ থানায় অভিযোগ জানানোর পরে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম নেতা-কর্মীরা। বংশগোপালবাবুর বক্তব্য, ‘‘কী ঘটেছে সাধারণ মানুষ দেখেছেন। এর পরেও ওরা মিথ্যে কথা বলছে। মানুষ সবই বুঝছেন।’’ এ দিন বিকেলে অন্ডালে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করে বিজেপি। ছিলেন দলের আসানসোল জেলা কমিটির সদস্য প্রসন্ন ভট্টাচার্য।
দুর্গাপুরে অবশ্য গোলমাল বেধেছে মঙ্গলবার থেকেই। স্থানীয় সূত্রের খবর, বিধাননগরের হাডকো মোড় লাগোয়া এলাকায় সিপিএমের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের সমর্থনে পোস্টার সাঁটানো হয়। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, তখন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হুমকি দেয়। এর পরে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ দলের হাডকো শাখার সম্পাদক অনিমেষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে চড়াও হয় বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী। অনিমেষবাবুকে বাড়িতে না পেয়ে গালিগালাজ করে ও হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে দুষ্কৃতীরা চড়াও হয় ডিওয়াইএফের স্থানীয় লোকাল সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্তীর উপরে। বাঁশ, লাঠি দিয়ে তাঁকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রাত ৯টা নাগাদ আবার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের স্থানীয় শাখা সম্পাদক রানাপ্রতাপ দাস-সহ আরও দুই দলীয় কর্মীর উপরে দুষ্কৃতীরা চড়াও হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ। পরে এবিএল সিটু অফিস ঘেরাও করে দলীয় কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছে সিপিএম। সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকারের অভিযোগ, ‘‘ধর্মঘটের সমর্থনে লাগাতার প্রচার চলছে। সাধারণ মানুষ উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তাই আতঙ্কে পড়ে তৃণমূল দুষ্কৃতীদের লেলিয়ে দিচ্ছে আমাদের কর্মীদের উপরে।’’
আহত নেতা অভিজিৎকে প্রথমে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল, পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার সকালে তাঁকে দেখতে যান সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপালবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মারধর করে যে সব দখল করা যায় না পুরভোটের ফল তা প্রমাণ করে দিয়েছে। তাই তৃণমূল আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে।’’ সিপিএমের তরফে নিউটাউনশিপ থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিকেলে হাডকো মোড়ে সভা করে সিপিএম। ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক। তিনি দাবি করেন, ‘‘তৃণমূলের বোধবুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে। তাই এ ভাবে রক্তের রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছে।’’
তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের ৩ নম্বর ব্লক যুব সভাপতি হৃদয় সাঁইয়ের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের কেউ হামলায় জড়িত নয়। বরং ধর্মঘটের পক্ষে প্রচারের নামে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’’ দলের ওই ব্লকের সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছে। পরপর নির্বাচনে তা প্রমাণিত। তবু মিথ্যে বলার অভ্যাস ওরা ত্যাগ করতে পারেনি!’’
ছবি: শৈলেন সরকার ও নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy