Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কলেজের ভাঙা পাঁচিলে হাতবদল নেশার জিনিস

দিনের আলো কমতে না কমতেই জড়ো হওয়া শুরু। কানা গলি, স্কুল-কলেজের পিছনের দিকে পাঁচিলের ধারে কিংবা মেসবাড়ির ঘর— আস্তানা মোটামোটি বাঁধা। কোথা থেকে জোগাড় হবে মৌজের জিনিসপত্র, সে সবও নির্দিষ্ট। গাঁজা থেকে ডেনড্রাইট, কাফ সিরাপ— বাদ নেই কিছুই।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:১২
Share: Save:

দিনের আলো কমতে না কমতেই জড়ো হওয়া শুরু। কানা গলি, স্কুল-কলেজের পিছনের দিকে পাঁচিলের ধারে কিংবা মেসবাড়ির ঘর— আস্তানা মোটামোটি বাঁধা। কোথা থেকে জোগাড় হবে মৌজের জিনিসপত্র, সে সবও নির্দিষ্ট। গাঁজা থেকে ডেনড্রাইট, কাফ সিরাপ— বাদ নেই কিছুই। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে এই ধরনের নেশার প্রবণতা বাড়ছে দুর্গাপুর শহরেও।

গত এক-দেড় দশকে দুর্গাপুর শহরে তৈরি হয়েছে নানা সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শহরে কর্মসংস্থানের সূত্রে আসা মানুষজনের ছেলেমেয়েদের জন্য হয়েছে নানা রকম স্কুল। গড়ে উঠেছে বহু ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ। বাইরে থেকে বহু পড়ুয়া শহরে আসেন সেখানে পড়াশোনা করতে। তাঁদের থাকার জন্য হস্টেলের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নানা মেসবাড়িও।

পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে নেশা করার প্রবণতা বেশি। ইঞ্জিনিয়ারিং বা ম্যানেজমেন্ট কলেজগুলিতে ভর্তির পরেই নানা রকম প্রলোভন আসতে থাকে পড়ুয়াদের কাছে। তাতে পা দিয়ে ফেলেন অনেকে। জনা কয়েক পড়ুয়া জানান, বিধাননগর এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কাছাকাছি গ্যাসের দোকান থেকে গাঁজা পাওয়া যায়। সুযোগ বুঝে সেখান থেকে গাঁজা কেনে অনেক পড়ুয়াই। বিধাননগরেই একটি মদের দোকানের কর্মচারীর মাধ্যমে মেসের ঘরে-ঘরে পৌঁছে যায় মদের বোতল। শুধু ফোন করে ‘অর্ডার’ দেওয়ার অপেক্ষা। জোগানের এই ব্যবস্থার বার্তা ছড়িয়েও পড়ে দ্রুত।

এ ছাড়াও লুকিয়ে নেশার সামগ্রী সরবরাহে যুক্ত রয়েছে কিছু যুবক। সিটি সেন্টারের একটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সীমানা পাঁচিলের একাংশ ভেঙে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। দেখে মনে হবে, শর্টকাট রাস্তা। সেখানেই সন্ধের পরে দাঁড়িয়ে থাকে সরবরহাকারী। তিন-চার জন পড়ুয়া পাঁচিল টপকে রাস্তায় নেমে তার কাছ থেকে সে সব কিনে নেয়। তার পরে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেঁটেই জায়গাটি পেরিয়ে যায় তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই দাবি করেন, বিধাননগর এলাকায় পড়ুয়াদের অনেক মেস থেকেই রাতের দিকে গাঁজা, ডেনড্রাইটের গন্ধ ভেসে আসে। এলাকার এক ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাশির সিরাপ বিক্রি গত কয়েক বছরে বেশ বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি দোকানের এক কর্মচারী বলেন, ‘‘প্রেসক্রিপশন দেখেই ওষুধ দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু জ্বর, সর্দি, কাশির ওষুধ এমনিই দিয়ে দেওয়া হয়। কাশির সিরাপও সারা বছর সে ভাবেই বিক্রি করা হয়।’’

চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত এই ধরনের নেশা করলে ক্যানসার-সহ নানা রোগ হতে পারে। খাদ্যনালী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসকদের অনেকেই মনে করেন, এখন অনেকেই বাবা-মায়েরই একটি বা দু’টি সন্তান। তাদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, সে কথা ভেবে ছেলেমেয়েদের হাতে হাতখরচ হিসেবে মোটা টাকা দেন অভিভাবকেরা। তাতে সমস্যা বাড়ছে। আবার অনেকের মতে, স্কুলে পড়ার সময়ে যতটা শাসনে থাকতে হয়, কলেজে গেলে তা অনেকটাই শিথিল হয়ে যায়। তার ফলেও বিপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

শহরের নানা কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কলেজের মধ্যে ধরা পড়লে বহিষ্কারের মতো কড়া শাস্তির ব্যবস্থা আছে। ফুলঝোড়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চেয়ারম্যান দুলাল মিত্র বলেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখের বিষয়, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নেশার প্রবণতা দিন-দিন বাড়ছে। শিক্ষকদের বলা হয়েছে, সন্দেহ হলেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে। হস্টেলেও কড়া নজরদারি আছে। অভিভাবকদেরও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বেশি করে যোগাযোগ রাখার বলা হয়েছে।’’

বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরার আশ্বাস, ‘‘পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। কিছু মদ, গাঁজার ঠেক ভাঙা হয়েছে। নজরদারি আরও বাড়াতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

drug
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE