Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
খণ্ডঘোষ

১১ জনের মুক্তির দাবিতে চিঠি নিহতদের পরিবারের

পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তিন তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছিল খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে। তৃণমূলের একাধিক নেতা, কর্মী মিলে ৪৩ জনের নামে মামলাও করেছিল পুলিশ। ২৮ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিহতের পরিজনেরা অভিযোগ করেছিলেন, বহু নিরাপরাধকে ধরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।

বিপজ্জনক পারাপার। কুলটিতে।

বিপজ্জনক পারাপার। কুলটিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৭
Share: Save:

পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তিন তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছিল খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে। তৃণমূলের একাধিক নেতা, কর্মী মিলে ৪৩ জনের নামে মামলাও করেছিল পুলিশ। ২৮ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিহতের পরিজনেরা অভিযোগ করেছিলেন, বহু নিরাপরাধকে ধরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, স্বরাষ্ট্র সচিব-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, ‘ভুয়ো’ সংঘর্ষ দেখিয়ে পুলিশ ‘নিরাপরাধ’ ১১ জনকে গ্রেফতার করে রেখেছে। তাঁদের মুক্তির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে।

গত ২১ জুন রাতে ওঁয়ারি গ্রামের বাগদি পাড়ার সর্বেশ্বর পুকুরের পাড় থেকে পুলিশ তৃণমূলের কর্মী মহম্মদ জামাল, শেখ সওকত ও আইনাল লায়েককে আশঙ্কা জনক অবস্থায় উদ্ধার করে। বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার সময় শেখ সওকত ও আইনাল লায়েক মারা যান। হাসপাতেল পৌঁছনোর পরে মৃত্যু হয় মহম্মদ জামালউদ্দিনের। পুলিশের দাবি ছিল, ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা পরেও নিহতের পরিজনরা অভিযোগ জমা না দেওয়ায় খণ্ডঘোষ থানার ওসি সুদীপ দাস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেন। তিনি ওই অভিযোগে জানান, ওই রাতে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা তথা খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে ৩২ জন ও মহম্মদ জামালউদ্দিন গোষ্ঠীর ১৫ জনের মধ্যে গোলমাল হয়। লাঠি, বাঁশ, টাঙি নিয়ে মারপিট বাধে। দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়েছে বলেও পুলিশের দাবি। পরে নিহত মহম্মদ জামালউদ্দিনের ভাই মইনুদ্দিন খণ্ডঘোষ থানায় ওই তিন জনকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে ১৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদ জামালউদ্দিনরা খণ্ডঘোষ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি অলোক মাজির ঘনিষ্ঠ।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দেওয়া চিঠিতে নিহতদের স্ত্রী-সহ ২২ জন সদস্য দাবি করেন, পুলিশ এফআইআর করে সংঘর্ষের ঘটনা বললেও তা ঠিক নয়। ওই তিন জনকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। তাঁদের আরও দাবি, সংঘর্ষ হলে দু’পক্ষের মানুষ আহত বা নিহত হতেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক পক্ষেরই তিন জনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। নিহত শেখ আইনাল লায়েকের স্ত্রী হালিমা বিবি ও নিহত মহম্মদ জামালের স্ত্রী জেসমিনা বেগমের অভিযোগ, “পুলিশ ভুয়ো সংঘর্ষ দেখিয়ে আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও স্বজনদের গ্রেফতার করেছে, যা অমানবিক। আমরা প্রশাসন ছাড়াও মানবাধিকার কমিশন ও সংখ্যালঘু কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছি।” তাঁদের আরও দাবি, অলোক মাজির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শ্যামল পাঁজা-সহ ১১ জনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে পুলিশ। শ্যামল পাঁজা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে তিনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। চিঠিতে তাঁরা দাবি করেছেন, ‘নির্দোষ’ ১১ জনকে ‘ভুয়ো’ সংঘর্ষ থেকে মুক্তি দেওয়া হোক এবং মূল অভিযুক্ত, মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে দোষীদের শাস্তি দিক প্রশাসন। এর আগে, নিহতদের পরিজনরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে ‘নির্দোষ’দের ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।

নিহতদের আইনজীবী তথা দক্ষিণ দামোদরের তৃণমূলের অন্যতম নেতা সদন তা-র অভিযোগ, “ভুয়ো সংঘর্ষ দেখিয়ে অন্যায় ভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। শ্যামলবাবুর মতো নিরীহকেও গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। নিহতদের পরিবারের দাবি মেনে পুলিশের উচিত আইন মোতাবেক নির্দোষদের মামলা থেকে রেহাই দেওয়া।” বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা সংঘর্ষ হয়েছে বলে জেনেছি। বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়ার পরে আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ করেছি। এই ঘটনায় যাঁরা যুক্ত তাঁদের নামই দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ নির্দোষ থাকেন তা তদন্ত করে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Victims family Khandaghosh bardhaman Trinamool
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE