Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বারবার দুষ্কর্ম, প্রশ্নে পুলিশ

শনিবার যেখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে, সেই বার্নপুর রোডের দু’পাশে রয়েছে অজস্র বহুতল আবাসন, দোকান, ছোট-বড় বাজার। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র তিনশো মিটার দূরে পুলিশ লাইন, পাঁচশো মিটার দূরে আসানসোল দক্ষিণ পুলিশ ফাঁড়ি।

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

সাড়ে চার বছরে তিন বার। প্রতি বারই ‘টার্গেট’, বেসরকারি স্বর্ণঋণ সংস্থা। এ ছাড়া একের পরে এক বন্ধ আবাসনে চুরি, খুন।— সবই ঘটছে পশ্চিম বর্ধমানে। শনিবার সকালে দিনের আলোয় আসানসোলের বেসরকারি স্বর্ণঋণ সংস্থায় ডাকাতির পরে জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দারা।

শনিবার যেখানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে, সেই বার্নপুর রোডের দু’পাশে রয়েছে অজস্র বহুতল আবাসন, দোকান, ছোট-বড় বাজার। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র তিনশো মিটার দূরে পুলিশ লাইন, পাঁচশো মিটার দূরে আসানসোল দক্ষিণ পুলিশ ফাঁড়ি। কয়েক কিলোমিটার দূরে খোদ পুলিশ কমিশনারের অফিস। দিনভর রাস্তা দিয়ে চলছে পুলিশের গাড়ি। দিনের আলোয় এমন ব্যস্ত এলাকায় কী ভাবে ডাকাতির ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে প্রকাশ্যে আক্ষেপ করতে শোনা যায় আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনাকেও। পুলিশি ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শনিবার যেখানে ডাকাতি হয়েছে, সেই শাখার এক আধিকারিকের দাবি, দুষ্কৃতীরা চম্পট দেওয়ার পরে অনেকবার ‘১০০ ডায়াল’ করা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। যদিও এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের দাবি, ‘‘এমনটা হতেই পারে না। ১০০ ডায়ালে ফোন করলেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।’’

শনিবার ওই সংস্থায় লুঠের খবর চাউর হতেই বহু ঋণগ্রহীতা কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমান। অনেকেই জানতে চান, তাঁদের বন্ধক দেওয়া সোনার কী অবস্থা। যদিও এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সংস্থার কর্মী, আধিকারিকেরা। তবে তাঁদের আশ্বাস, ঋণগ্রহীতারা ক্ষতির মুখে পড়বেন না। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সীমা সরকার বলেন, ‘‘ব্যবসার টাকা জোগাড় করতে সোনার গয়না বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলাম। শুক্রবার গয়না ফেরত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শরীর খারাপ থাকায় আসতে পারেননি। শনিবার শুনলাম, সব লুঠ হয়ে গিয়েছে।’’ একই ভাবে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ নেওয়া বার্নপুরের বাসিন্দা সুশীলা সিংহকেও।

এর আগে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এই সংস্থারই দুর্গাপুরের ভিড়়িঙ্গি শাখায় ৩৬ কেজি সোনা, নগদ ১১ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। যদিও ওই ঘটনার কিনারা করে ফেলেছে পুলিশ। এর পরে চলতি বছরের ৫ জুন বিকেলে ফের অন্য একটি বেসরকারি স্বর্ণঋণ সংস্থায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাতেও ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করেন কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা নিজে। পরে ওমপ্রকাশ প্রসাদ নামে এক জনকে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু তার পরে তদন্ত তেমন এগোয়নি বলে অভিযোগ।

এ ছাড়া আসানসোল ও দুর্গাপুরের একাধিক এলাকায় গত কয়েক বছরে বন্ধ আবাসনে চুরি এবং খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার যদিও বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা ভাল হয়নি। তবে পুলিশ দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। প্রাথমিক কিছু তথ্য মিলেছে। দোষীরা ধরা পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE