Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ বার ইভিএম খুললে বাঁচি

সন্ধ্যায় আড্ডা বসেছিল দলের অফিসে। পাঁচগাছিয়ায় কর্মী-সমর্থক, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেই আসরে মধ্যমনি হয়ে বসেছিলেন বারাবনির তৃণমূল প্রার্থী বিধান উপাধ্যায়। কথাবার্তার ফাঁকে হাসতে হাসতেই প্রার্থীর উক্তি, ‘‘আর কিন্তু তর সইছে না। এ বার ইভিএম-টা খুললে বাঁচি।’’

বাঁ দিকে, বাড়িতে রান্নায় ব্যস্ত শিপ্রাদেবী। ডান দিকে, ছেলের সঙ্গে বিধান। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, বাড়িতে রান্নায় ব্যস্ত শিপ্রাদেবী। ডান দিকে, ছেলের সঙ্গে বিধান। নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
বারাবনি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০১:১৬
Share: Save:

সন্ধ্যায় আড্ডা বসেছিল দলের অফিসে। পাঁচগাছিয়ায় কর্মী-সমর্থক, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেই আসরে মধ্যমনি হয়ে বসেছিলেন বারাবনির তৃণমূল প্রার্থী বিধান উপাধ্যায়। কথাবার্তার ফাঁকে হাসতে হাসতেই প্রার্থীর উক্তি, ‘‘আর কিন্তু তর সইছে না। এ বার ইভিএম-টা খুললে বাঁচি।’’

ভোট মিটে গিয়েছে এক মাস আগে। ফল বেরোতে এখনও কিছু দিন বাকি। ইভিএমে কী হিসেব জমা হয়ে রয়েছে, সে নিয়ে জল্পনা-আলোচনার শেষ নেই। যত দিন এগিয়ে আসছে রক্তচাপও যেন বাড়ছে প্রার্থীদের। টেনশন হচ্ছে কি না জিজ্ঞাসা করলেই অবশ্য সকলের সটান জবাব, ‘‘আরে না না, ও সব কিছু নেই। মানুষ নিশ্চিন্তে ভোট দিয়েছেন। ফল আমাদের পক্ষেই যাবে।’’

মুখে প্রকাশ না করলেও স্নায়ুর চাপ যে বাড়ছে, বারাবনির তিন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেই তা পরিষ্কার। দলের কাজকর্মের চাপ এখন অনেকটাই কম। তাই সকালটা বাড়িতে পরিবারের সঙ্গেই কাটছে বিধানবাবুর। কিন্তু সন্ধ্যায় পাঁচগাছিয়ায় দলের কার্যালয়ে এক বার আসা চাই। বন্ধু-অনুগামীদের সঙ্গে খানিক গল্পগুজব করে বাড়ি ফেরেন। হাল্কা আলোচনার মাঝে এক জন প্রশ্ন করলেন, ‘‘রাজ্যে এ বার সরকার হচ্ছে তো?’’ ‘‘আঃ, ছাড়ো তো রাজ্যের কথা। বারাবনিটা কী হবে বলো’’— বিরক্ত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন বিধানের। পাশে বসে থাকা নেতা-কর্মীরা মুচকি হেসে জানান, একটুতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। নেতাকে তাঁরা অভয় দেন, বারাবনিতে এ বার কংগ্রেসের অনেক ভোট তৃণমূলের বাক্সে পড়েছে। তাই এত চিন্তার কিছু নেই।

ফল যাই হোক, সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে নিয়মিত হাজির থাকতে হচ্ছে, জানাচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী শিপ্রা মুখোপাধ্যায়। সকাল সাড়ে ৮টায় বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, থিকথিকে ভিড়। জানালেন, একটি কর্মসূচি রয়েছে। এখনই বেরোতে হবে। সে দিনই দুপুরে জেমারিতে দলের কার্যালয়ে বসেছিলেন দলের কর্মীদের সঙ্গে। টেনশন হচ্ছে কি না জানতে চাইলে পাশ থেকে এক জন বলে উঠলেন, ‘‘তা আর হবে না। ইভিএম কী বলবে, বোঝা খুব মুশকিল!’’ সে কথা ফুরোতে না ফুরোতেই শিপ্রা বলেন, ‘‘এত চিন্তার কিছু নেই। মনোহরবহালের বুথগুলোয় ভুয়ো ভোট এ বার রুখে দিয়েছি।’’ কিন্তু সালানপুরের কংগ্রেস কর্মীদের একটা অংশের ভোট কোথায় পড়েছে, সে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সিপিএমের এক জোনাল স্তরের নেতা। তিনি বলেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই। অঙ্ক বলছে, কংগ্রেসের ভোট যদি না পাই, তা হলে চাপ হবে।’’

অন্য দু’জনের তুলনায় হাল্কা মেজাজে আছেন বিজেপির প্রার্থী অমল রায়। দিনের বেশির ভাগ সময় নুনিতে পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যায় বসছেন দলের গ্রামের কার্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘‘এখন শুধু দিন গুণছি।’’ টেনশন হচ্ছে না? সহাস্য জবাব, ‘‘আমার তো হারানোর কিছু নেই। বেশ বুঝতে পারছি, এ বার প্রাপ্তিযোগ আছে।’’ তবে টেনশন একটা আছেই। তবে সেটা হারজিতের নয়। প্রার্থীর এক সঙ্গী জানান, নুনির প্রায় বাইশশো ভোটারের ভোট কতটা নিজের দিকে টানতে পেরেছেন অমলবাবু, সেটাই এখন দেখার। কারণ, তৃণমূল দাবি করেছে, এই গ্রাম থেকে দল ৩০০ ভোটে এগিয়ে থাকবে। তা যদি সত্যি হয়, তবে আর মুখ দেখানো যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC EVM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE