Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঋণ না থাকলেও মিলতে পারে বিমা, খবর নেই চাষিদের কাছে

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের বিমা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে চাষিদের। অথচ জেলার বেশির ভাগ চাষিই জানেন না সে খবর। একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে দেখা গিয়েছে, তাঁদের ধারনা ঋণ থাকলে তবেই বিমার সুবিধা মেলে। এ বিষয়ে বিশেষ প্রচার হয়নি বলেও তাঁদের দাবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০১:৩৮
Share: Save:

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের বিমা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে চাষিদের। অথচ জেলার বেশির ভাগ চাষিই জানেন না সে খবর। একাধিক চাষির সঙ্গে কথা বলে দেখা গিয়েছে, তাঁদের ধারনা ঋণ থাকলে তবেই বিমার সুবিধা মেলে। এ বিষয়ে বিশেষ প্রচার হয়নি বলেও তাঁদের দাবি।

হরিপুর, কুলটির মতো কয়েটি ব্লক ছাড়া এ জেলার বেশির ভাগ এলাকাতেই চাষাবাদ হয়। কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী কৃষকের সংখ্যা ৪,৮৭,৫৮৩। তার মধ্যে বর্ধমান সদর মহকুমায় ২,৪৯,৭৪৭, কালনা মহকুমায় ৯৬,৩৯৭ এবং কাটোয়া মহকুমার চাষির সংখ্যা ৫২,৬৮৩ জন। বছরের বিভিন্ন সময়ে অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী-সহ নানা কারণে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতি বছরই ক্ষতির মুখে পড়তে হয় চাষিদের। কিন্তু বিমার সুবিধা একমাত্র ঋণী কৃষকেরাই পান বলে তাঁদের দাবি। অর্থাৎ যে সমস্ত কৃষকরা নিজেদের কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক বা সমবায় সমিতির কাছ থেকে ঋণ নেন, তাঁরাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শস্যবিমার সুবিধা পান। অথচ কৃষি দফতরের নিয়ম অনুয়ায়ী, যে কোনও চাষিই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শস্যবিমা পেতে পারেন। শুধু কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকতে হবে। কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, আলু চাষে ছাড়া অন্য চাষে শস্যবিমার জন্য যে অর্থ লাগে তা সরকারি ভাবে বিমা সংস্থাকে মিটিয়ে দেওয়া হয়। যে সমস্ত চাষিরা ব্যাঙ্ক অথবা কৃষি সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নেন তাঁদের টাকা দেওয়ার আগে শস্যবিমা বিষয়ক একটি ফর্মে সই করিয়ে নেওয়া হয়। ওই ফর্মেই চাষ সম্পর্কিত নানা নথি থাকে। পরে ব্যাঙ্ক অথবা সমবায় ওই ফর্ম পাঠিয়ে দেয় বিমা সংস্থার কাছে। আর ঋণী নন এমন চাষিদের চাষের আগে কাছাকাছি ব্যাঙ্ক অথবা সমবায়ে গিয়ে বিমা সংক্রান্ত ফর্ম তুলতে হয়। কোন ধরনের চাষ, মৌজার নাম, জমির পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য ওই ফর্মে লিখে সেখানেই জমা দিতে হয়। তারপরে সেই নথি ব্যাঙ্ক অথবা সমবায় সমিতি ঘুরে পৌঁছয় বিমা সংস্থার কাছে। প্রিমিয়ামের টাকা সরকারের কাছ থেকেই নিয়ে নেয় ওই সংস্থা।

কিন্তু সুবিধা থাকলেও ঋণ নেয় এমন চাষিরা এই সুযোগ পান না বলেই অভিযোগ। তাঁদের দাবি, কীভাবে বিমার সুবিধা মেলে তাঁরা তা জানেন না। পূর্বস্থলীর ধান চাষি সুদেব ঘোষ বলেন, ‘‘ঋণ নেওয়ার পর ফসলে বিপর্যয় দেখা দিলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে শস্যবিমার টাকা মেলে। কিন্তু ঋণ ছাড়াও যে শস্যবিমার আওতায় আসা যায় তা জানি না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সম্প্রতি কালবৈশাখীতে আমার সাত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জানলে বিমা করাতে পারতাম।’’ কালনার আলু চাষি গোলাম নবি শেখও বলেন, ‘‘নাবি ধসার প্রকোপ আলু চাষে লেগেই থাকে। ঋণ না নিয়েও যদি শস্যবিমার আওতায় আসা যায় তাহলে আমার মতো অনেক চাষিই আগ্রহী হবেন।’’ সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চাষিরা ফি বছর ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে এই জেলায় চাষাবাদ করেন। ফলে বিপুল সংখ্যক চাষিরা শস্যবিমার সুবিধা থেকে বঞ্চিতই রয়ে যান।

কিন্তু সরকারি সুবিধার লাভ কেন সব চাষি পাবেন না? অধিকাংশ চাষিদের দাবি, ব্যাঙ্ক, সমবায় থেকে ঋণ না নিয়েও যে শস্যবিমার সুবিধা মেলে সরকারি ভাবে এ নিয়ে তেমন প্রচার নেই। পাশাপাশি যে কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকলে শস্যবিমার সুবিধা মেলে জেলার বড় অংশের চাষিদের কাছে সেই কার্ড পৌঁছয় নি। জেলার এক কৃষি কর্তার দাবি, কিসান ক্রেডিট তৈরির ব্যাপারে গতি এলেও আরও তৎপরতা প্রয়োজন। তাঁর দাবি, লোকজনের অভাবে নিয়মিত শিবির করা যায় না। পাশাপাশি নিজের নামে জমি না থাকায় অনেকে চাষিরই কার্ড পেতে সমস্যা হয়। আবার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কিসান ক্রেডিট কার্ড থাকলেও তারা মহাজনি প্রথা থেকে বেরোতেই পারেননি। ফলে চাষের আগে বহু চাষি মহাজনের কাছে বীজ, সার-সহ নানা ব্যাপারে সাহায্য নিয়ে থাকেন। ফসল উঠলে মহাজনকেই তা বিক্রি করে দেন। আবার কৃষি সমবায় এবং ব্যাঙ্কগুলিও ঋণবিহীন চাষিদের শস্যবিমার ব্যাপারে তেমন উৎসাহী নয় বলে অভিযোগ। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার তো বলেই ফেললেন, ‘‘কৃষি ঋণের সঙ্গে ব্যাঙ্কের প্রত্যক্ষ ব্যবসা জড়িয়ে থাকে। ফলে ব্যাঙ্ক স্বাভাবিক ভাবেই ঋণী চাষিদের প্রতি দায়বদ্ধ। কিন্তু অঋণী চাষিদের ক্ষেত্রে ব্যাবসায়িক সুযোগ না থাকায় ব্যাঙ্ক আলাদা ভাবে এ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায় না।’’

কৃষি দফতর অবশ্য প্রচারে ঘাটতির কথা মানতে চায়নি। বর্ধমানের এক সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘কৃষিমেলা, সেমিনার-সহ কৃষি সংক্রান্ত নানা আলোচনায় নিয়মিত বিস্তারিত ভাবে চাষিদের কিভাবে শস্যবিমার সুবিধা পেতে হয়, তা জানানো হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE