ক্লাস নিচ্ছেন নিত্যানন্দ মিশ্র। ছবি: পাপন চৌধুরী
অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতোই নিয়মিত স্কুলে আসেন তিনি। ক্লাস নেন নিয়ম করে। প্রয়োজনে সাহায্য করেন শিক্ষাকর্মীর কাজেও। তবে পুরোটাই বিনা পারিশ্রমিকে। বারাবনির পুঁচরা ভগবান মহাবীর জৈন সরাক হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক নিত্যানন্দ মিশ্র এই কাজ করে চলেছেন গত চার বছর ধরে।
স্কুলে আরও ন’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। তবে বাংলা ও সংস্কৃত পড়ানোর কেউ নেই। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের ওই দু’টি বিষয় পড়ান নিত্যানন্দবাবুই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ উপাধ্যায় জানান, ২০১৪ সালে স্কুলে ওই দু’টি বিষয়ে শিক্ষকের পদ খালি হয়েছে। তার পরে নতুন নিয়োগ হয়নি। শিক্ষা দফতরে আবেদন করা হলেও নতুন স্থায়ী শিক্ষক মেলেনি। এক জন পার্শ্বশিক্ষক রয়েছেন, কিন্তু নিয়মের কারণে তিনি নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস নিতে পারেন না।
নিত্যানন্দবাবু এই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র। প্রধান শিক্ষক অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘স্কুলে যখন শিক্ষকের সমস্যা চলছে, সেই সময় নিত্যানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা নিয়ে স্নাতোকোত্তর পাশ করে গ্রামে গৃহশিক্ষকতা শুরু করেছে। ওকে স্কুলে পড়াতে অনুরোধ করলাম। পারিশ্রমিক দিতে পারব না, বললাম। ও কিন্তু এক কথায় রাজি হল।’’
স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, একমনে ক্লাস নিচ্ছেন নিত্যানন্দবাবু। ক্লাস শেষে পড়ুয়াদের কেউ-কেউ কমনরুমে তাঁর কাছে পড়া বোঝার জন্য হাজির হয়। যত্ন নিয়ে তাদের সাহায্য করেন তিনি। বছর আঠাশের এই শিক্ষক জানান, স্নাতকোত্তরের পরে শিক্ষকতা করবেন বলেই ঠিক করেছিলেন। সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। এমন সময়ে নিজের পুরনো স্কুলে শিক্ষকের সমস্যা তৈরি হয়েছে শুনে কাজ করতে রাজি হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য পড়াতে আসি। তার সঙ্গে আমার নিজেরও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হচ্ছে।’’ গৃহশিক্ষকতা করে যা রোজগার হয় ,তাতে নিজের খরচ চলে যায়, জানান তিনি।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন মাত্র এক জন। তাঁর কাজের চাপ বেশি থাকলে সাহায্য করেন নিত্যানন্দবাবু। ক্লাসঘরের তালা খুলে দেওয়া থেকে ক্লাস শেষে ঘণ্টা বাজানো, অনেক সময়েই এমন নানা কাজ করতে দেখা যায় তাঁকে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুলের নিজস্ব তহবিল নেই বললেই চলে। সে কারণে নিত্যানন্দবাবুকে তাঁরা কোনও পারিশ্রমিক দিতে পারেন না। জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয় পাল বলেন, ‘‘এখনও এমন কিছু শিক্ষাদরদি মানুষজন আছেন বলেই গ্রামের পড়ুয়ারা এগিয়ে যেতে পারছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy