Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাত বছর পরে ক্ষতিপূরণ হাতে পেলেন মৃতের স্ত্রী

সানোয়ার লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, পুলিশের মারধরে জখম হয়ে উত্তমের মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুলিশ দাবি করে, মোটরবাইকে করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ঝাঁপ দিয়ে পালাতে যান উত্তম।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর প্রায় সাত বছর পরে মৃতের পরিবারকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মেনে ক্ষতিপূরণ দিল রাজ্য সরকার। চলতি বছরের ৯ জুলাই মৃত উত্তম মালের (৩৩) স্ত্রী সুখীদেবীর হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেয় প্রশাসন।

২০১২-র ৩ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি সানোয়ার শেখ পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান, দুর্গাপুরের সেপকো এলাকায় তিনি ও তাঁর জেলার কয়েক জন নির্মাণ কাজ করেন। ১ সেপ্টেম্বর তাঁদেরই তিন জন ভারতী রোডে বেড়াতে যান। সন্ধ্যায় বিদ্যাপতি রোড ও জয়দেব রোডের উল্টো দিকে জঙ্গলের রাস্তা ধরে ফেরার সময়ে দুষ্কৃতী সন্দেহে তাঁদের তাড়া করে পুলিশ। ভয়ে তাঁরা দৌড়তে শুরু করেন। রঘুনাথগঞ্জের ঝাড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা উত্তমকে ধরেও ফেলে পুলিশ। রাত ১০টা নাগাদ সানোয়ার শেখ জানতে পারেন, উত্তমকে গুরুতর জখম অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ভোরবেলায় পুলিশ তাঁকে গাড়ি ভাড়া করে বহরমপুর হাসপাতালে পাঠায়। ৩ সেপ্টেম্বর সকালে সেখানেই মারা যান উত্তম।

সানোয়ার লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, পুলিশের মারধরে জখম হয়ে উত্তমের মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুলিশ দাবি করে, মোটরবাইকে করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ঝাঁপ দিয়ে পালাতে যান উত্তম। তাতেই পড়ে জখম হন তিনি। ঘটনায় জড়িত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থার দাবিতে সেপকো এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ বহরমপুর থেকে উত্তমের দেহ এনে দুর্গাপুর থানার সামনে দেহ রেখে দিনভর বিক্ষোভ দেখান। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দেয় পুলিশ।

বাবা, মা, স্ত্রী ও চার মেয়ের সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন উত্তম। তাঁর মৃত্যুর পরে পরিবারটি অথৈ জলে পড়ে। ওই বছরই ১০ অক্টোবর একটি মানবাধিকার সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করলে কমিশন দুর্গাপুরের এসিজেএম-কে ‘জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেরিয়াল এনকোয়ারি’র নির্দেশ দেন। ২০১৩-র ১৩ মে দুর্গাপুর আদালত থেকে উত্তমের পরিবারকে সে কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়। ২ জুলাই এসিজেএম কাজি আবুল হাসেম মামলার শুনানি শুরু করেন। ৩ জুলাই উত্তমবাবুর পরিবারের লোকজন হাজির হন আদালতে। মোট প্রায় ৪৫ জনের বক্তব্য শোনেন বিচারক।

রাজ্যের অভিযোগকারী মানবাধিকার সংগঠনটির সম্পাদক কিরীটী রায় জানান, ‘জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেরিয়াল এনকোয়ারি’র রিপোর্ট পেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কেন পরিবারটিকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি, তা রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চায়। রাজ্য সরকারের জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকারকে কমিশন পরিবারটিকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

এপিডিআর-এর দুর্গাপুর শাখার প্রাক্তন সম্পাদক দিলীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘লাগাতার চেষ্টায় অবশেষে পরিবারটি ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।’’ অভিযোগকারীর পক্ষের আইনজীবী জ্ঞানেন্দ্রনারায়ণ সিংহ বলেন, ‘‘আমি এই মামলায় কোনও টাকা নিইনি। কোর্ট ফি-সহ যাবতীয় খরচও বহন করেছি। মানবাধিকার কমিশন থেকে আমাকে পরে টাকা দিতে চাওয়া হয়। তা-ও নিইনি। আমি খুশি, এত দিনের লড়াইয়ের ফল পেল পরিবারটি।’’

ক্ষতিপূরণ পেয়ে মৃতের স্ত্রী-ও বলেন, ‘‘যে গেছে, সে তো আর ফিরবে না। তবে এত দিনের লড়াইয়ের পরে কিছুটা হলেও যেন স্বস্তি পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Compensation National Human Rights Commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE