Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নালা থেকে উদ্ধার বধূর দেহ, খুনি কি শ্বশুর-শাশুড়ি?

দুর্গাপুর থানার পুলিশ জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর তামলা নালা থেকে উদ্ধার করা হয় বছর বাইশের এক মহিলার বস্তাবন্দি দেহ। মহিষ্কাপুরের বাসিন্দারা জানান, ওই দিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন এলাকার বধূ সনিয়া মির্দা (২২)। তাঁর বাপের বাড়ি, ঝাড়খণ্ডের দুমকায়। বছর দুয়েক আগে সনিয়ার বিয়ে হয় মহিষ্কাপুরের এক জনের সঙ্গে।

সনিয়া মির্দা। নিজস্ব চিত্র

সনিয়া মির্দা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

বেশ কিছু দিন আগে তামলা নালা থেকে উদ্ধার হয়েছিল অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার দেহ। ওই দিনই শহরের অন্য একটি এলাকা থেকে নিখোঁজ হন এক বধূ। ওই এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের কাছে বধূকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন শ্বশুর। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া দেহ ওই নিখোঁজ বধূরই। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে মহিলার শ্বশুর, শাশুড়িকে। বুধবার দুর্গাপুরের মহিষ্কাপুর প্লটের ঘটনা।

দুর্গাপুর থানার পুলিশ জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর তামলা নালা থেকে উদ্ধার করা হয় বছর বাইশের এক মহিলার বস্তাবন্দি দেহ। মহিষ্কাপুরের বাসিন্দারা জানান, ওই দিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন এলাকার বধূ সনিয়া মির্দা (২২)। তাঁর বাপের বাড়ি, ঝাড়খণ্ডের দুমকায়। বছর দুয়েক আগে সনিয়ার বিয়ে হয় মহিষ্কাপুরের এক জনের সঙ্গে।

পড়শিদের একাংশ জানান, কয়েক দিন সনিয়ার দেখা না মেলায় তাঁরা মহিলার শ্বশুরবাড়িতে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। সেই সময়ে তাঁদের বলা হয়, সনিয়া বাপের বাড়ি গিয়েছেন। অথচ, ২ সেপ্টেম্বরের কয়েক দিন পরে দুমকা থেকে নিহতের বাবা মা-সহ অন্য নিকটাত্মীয়েরা মহিষ্কাপুরে আসেন। তাঁদের নিহতের শ্বশুরবাড়ি থেকে জানানো হয়, সনিয়া পালিয়ে গিয়েছেন। নিহতের বাবা-মা দুর্গাপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করে ফিরে যান দুমকায়। কিন্তু এমন দু’রকম কথা শুনে সন্দেহ দানা বাঁধে পড়শিদের মধ্যে।

এর পরে বুধবার পড়শিদের একাংশ বধূর শ্বশুর, শাশুড়িকে চেপে ধরেন। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তাঁদের কাছে ওই ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, তিনি সনিয়াকে খুন করে দেহ বস্তাবন্দি করেন এবং রিকশায় চড়ে তামলায় নালা গিয়ে দেহ ফেলে দেন। দু’-এক জন শ্বশুর-শাশুড়ির উপরে চড়াও হন বলেও অভিযোগ। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ এসে বধূর শ্বশুর, শাশুড়িকে আটক করে।

তবে কী ভাবে এই মৃত্যু, তা নিয়ে পড়শিরাও সংশয়ে। প্রথমত, নির্মল বাগদি নামে এক জন বলেন, ‘‘সনিয়ার শ্বশুর প্রথমে বলে, ওই মহিলা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। তার পরে তাঁর দেহ বস্তায় ভরে রিকশায় চড়ে তামলা নালায় ফেলে আসেন শ্বশুর। এ দিন থানায় কেন খবর দেওয়া হয়নি জানতে চাওয়া হলে কথাবার্তায় অসঙ্গতি মেলে ওই ব্যক্তির। ঠিক কী ঘটেছে বলা মুশকিল।’’

দ্বিতীয়ত, এলাকাবাসীর একাংশ জানান, সনিয়া সাধারণত সকাল-বিকেল, দু’বেলা জল নিতে বাইরে আসতেন। কলতলায় এলাকার অন্য মহিলাদের কাছে অভিযোগ করতেন, শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে নির্যাতন করা হচ্ছে। ফলে এটি গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাও হতে পারে।

তৃতীয়ত, পড়শিদের একাংশের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে নিহতের শ্বশুরের তন্ত্র-সাধনার যোগ থাকতেও পারে। ওই বাড়িতে বহু ঠাকুর-দেবতার ছবি সারি দিয়ে রাখা। গভীর রাত পর্যন্ত ধুপ, ধুনোর গন্ধ, সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণের শব্দ পাওয়া যেত ওই ঘর থেকে। নারী নিগ্রহ বিরোধী নাগরিক কমিটির দুর্গাপুর শাখার তরফে সুচেতা কুণ্ডুও দাবি করেছেন, ‘‘দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তন্ত্র-মন্ত্রের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।’’

তবে তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার রাতে বাড়ি ছিলেন না মৃতার স্বামী। তবে তাঁকেও জেরা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dead Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE