Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Death

পুকুরে হাত বাঁধা মহিলার দেহ, আত্মঘাতী যুবক

পুলিশের অনুমান, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের টানাপড়েনেই ছাতনি গ্রামের পম্পা রায়কে (৩৫) খুন করেছেন খেড়ুর গ্রামের জয়ন্ত সিংহ (২৭)।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ভাতার শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

সকালে পুকুরে গিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা বধূর দেহ ভাসছে, দেখতে পান কয়েকজন মহিলা। কেন এমন ঘটনা, পুলিশে জানানোর আগেই খবর আসে, পাশের গ্রামের এক যুবকও গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। দেড় কিলোমিটারের মধ্যে ভাতারের দুই গ্রাম ছাতনি ও খেড়ুরে এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। পুলিশ দেহ দু’টি উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়।

পুলিশের অনুমান, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের টানাপড়েনেই ছাতনি গ্রামের পম্পা রায়কে (৩৫) খুন করেছেন খেড়ুর গ্রামের জয়ন্ত সিংহ (২৭)। পরে তিনিও আত্মঘাতী হন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের দাবি, দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয় ওই মহিলাকে। পরে ওই দড়ি দিয়েই পিছমোড়া করে হাত বেঁধে বাড়ির কাছে তালবোনা পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে। মৃতের স্বামী তপন রায় জয়ন্তর নামে খুনের অভিযোগও করেছেন ভাতার থানায়।

তাঁর দাবি, মাস ছয়েক আগে টানা দু’মাস ওই যুবকের সঙ্গে অন্যত্র ঘরভাড়া নিয়ে থাকছিলেন পম্পা। পরে মেয়ের জেদে পুজোর পরে বাড়ি ফেরেন। তারপর থেকে অবশ্য তিনি সংসারেই মন দিয়েছিলেন, দাবি তপনবাবুর। কিন্তু জয়ন্ত প্রায়ই তাঁকে উত্ত্যক্ত করতেন বলে অভিযোগ। তপনবাবুর দাবি, সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়াতেই স্ত্রীকে খুন করেছেন জয়ন্ত।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় এক মাস ধরে নিজেকে ‘ঘরবন্দি’ করে রেখেছিলেন জয়ন্ত। দিনভর নেশা করতেন। দোতলা মাটির উপরের ঘর থেকে দিনে এক বারের বেশি বার হতেন না বলেও জানা গিয়েছে। তবে গত চার দিনে একবারের জন্যও বার হননি তিনি। ওই পরিবারের দাবি, সোমবার রাত ১০টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন তিনি। রাত আড়াইটা নাগাদ ফেরেন। এই ফাঁকেই পম্পাদেবী খুন হয়েছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।

পুলিশের দাবি, জয়ন্ত যে তালবোনা পুকুর পাড়ে গিয়েছিলেন হাত-পায়ের ছাপ থেকে তা স্পষ্ট। জয়ন্তর মা মঙ্গলা সিংহও তদন্তকারীদের কাছে ওই রাতে ছেলের বাইরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, মাস দেড়েক ধরেই ছেলের মতিগতি ভাল নয়। ভয়ে ছেলেকে কিছু বলতেও পারতেন না তিনি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এক বার জিজ্ঞাসা করলে হয়তো এই দিনটা দেখতে হতো না।’’ মঙ্গলবার সকালে ছেলের ঘরে খাবার থালা আনতে গিয়ে তিনিই ঝুলন্ত দেহটি দেখেন। এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পম্পাদেবীর ছেলে ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করেন। মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পেশায় ট্রাকচালক জয়ন্তর সঙ্গে ফোনেই আলাপ তাঁর। পুলিশ ও পরিবারের দাবি, জয়ন্তর সঙ্গে পালিয়েও গিয়েছিলেন তিনি। পরে ফিরে আসেন। তপনবাবু বলেন, ‘‘ভোরে শৌচাগারে যাওয়ার জন্য উঠে দেখি পম্পা নেই। সদর দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। ডাকাডাকির পরে পাশের বাড়ি থেকে মা এসে দরজা খুলে দেন। পম্পাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ভেবেছিলাম, আবার পালিয়েছে। কিন্তু খুন হয়ে যাবে, সত্যিই ভাবিনি।’’

জয়ন্তর বাবা গণেশবাবুর কথায়, ‘‘আমার ছেলে এমন কাণ্ড করেছে, ভাবতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Woman Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE