Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বেগড়বাঁই দেখলেই হাজির ভুক্তভোগী প্রতিমা

তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রামে মদ খেয়ে একসঙ্গে ৮ জন মারা গিয়েছিলেন। তাতেও আমার স্বামীর শিক্ষা হয়নি। কয়েক মাস আগে দু’দিন বাড়িতে পড়ে থাকার পরে সে-ও মারা যায়। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, আর নয়। মহিলাদের একজোট করতে না পারলে চোলাই আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেবে।’’

প্রতিমা বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র

প্রতিমা বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
গলসি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩০
Share: Save:

জীবন তাঁকে শিখিয়েছে, ‘মদের নেশা, সর্বনাশা’। তার উপর সে মদ যদি চোলাই হয়, তাহলে তো কথায় নেই।

এই চোলাইয়ের ‘বিষে’ই স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি, ভেসে গিয়েছে সংসার। তারপর থেকে পাড়ার মহিলাদের একজোট করে মদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোই কাজ গলসির করকনা গ্রামের প্রতিমা বাউড়ির। বেগড়বাঁই দেখলেই সোজা থানায় ফোন করে দেন তিনি। পুলিশের ডান্ডা আর তাঁর ভয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে উধাও গ্রামের চোলাইয়ের ভাটি, মদের ঠেক।

গ্রামে ঢুকতেই পুকুরের বাঁ দিকে রাস্তায় প্রতিমাদেবীর বাড়ি। রাস্তায় দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রামে মদ খেয়ে একসঙ্গে ৮ জন মারা গিয়েছিলেন। তাতেও আমার স্বামীর শিক্ষা হয়নি। কয়েক মাস আগে দু’দিন বাড়িতে পড়ে থাকার পরে সে-ও মারা যায়। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, আর নয়। মহিলাদের একজোট করতে না পারলে চোলাই আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেবে।’’ এক সময় গ্রামে ঢুকলেই চোলাইয়ের গন্ধ পাওয়া যেত। এখন সেখানে চোলাই তৈরি তো দূর, বিক্রিও নিষিদ্ধ। গ্রামের মেয়ে, বউ থেকে যুবক সবারই দাবি, মদ তৈরি বা বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।

গত বছর ৩ জানুয়ারি চোলাইয়ে বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিলেন ৮ জন। মদ-প্রস্তুতকারক আন্না বাউরি এখন জেলে। তাঁর দাদা সোনাও মদের কবলে পড়ে মৃত। ঘটনার দিনই আন্নার ভাটি-দোকান ভেঙে ফেলা হয়। সেই সব চিহ্ন এখনও রয়েছে। মাটির বাড়ির জায়গায় তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি। আন্নার বউদি রূপাদেবী বলেন, ‘‘দু’একবার চোলাইয়ের গন্ধ নাকে এসেছিল। প্রতিমা হুঁশিয়ারি দিয়ে সবাইকে নিয়ে ভেঙে দিয়েছে।’’

আরও পড়ুন: ভরা বাসে ‘অসভ্যতা’, যুবককে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে পুলিশের হাতে দিলেন বধূ

স্কুল পড়ুয়া টিয়া বাউড়ি, গ্রামের মহিলা আল্পনা বাউড়িদের কথায়, ‘‘আমাদের একটি দল রয়েছে। কে মদ খাচ্ছে, কারা মদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসছে সব নজরে রাখি। গুড়ের পরিমাণ বেশি এসেছে খবর পেলেই প্রতিমাদির নেতৃত্বে সেই বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়।’’ দলে রয়েছেন এলাকার যুবকেরাও। রাজীব বাউরি, তাপস বাউরি, অরূপ বাউরিদের কথায়, ‘‘এখন মদ তৈরি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কোনও খবর পেলেই প্রতিমাদির কানে তুলে দেওয়া হয়। মদ খেয়ে কেউ অসভ্যতামি করছে জানতে পারলে তাঁকে শাঁসানো হয়।’’ ১৫ দিন থেকে এক মাস অন্তর গ্রামের মহিলারা মিলে নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনাও করেন তাঁরা। খোঁজা হয় সমাধান।

আবগারি দফতরের জেলা সুপারিন্টেন্ডেন্ট গৌতম পাখরিন বলেন, ‘‘এ বার মদ-বিরোধী অভিযানে প্রতিমদেবীকে সামনে রাখব ঠিক করেছি। তাঁর অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরলেই বোঝা যাবে, নেশা কতটা সর্বনাশা।’’

আর প্রতিমাদেবী বলেন, ‘‘আমরা চাই না, গ্রামের কেউ মদের নেশায় জীবন দিক। সে জন্যই এই লড়াই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch Protest Galsi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE