Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়াশোনা শেষেই বিয়ে, বার্তা বৃদ্ধার

কৈশোর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বুঝেছিলেন কমবয়সে বিয়ের কুফল। স্বামীর সঙ্গে তাই ব্রতী হয়েছিলেন এলাকার মেয়েদের শিক্ষিত করতে, সচেতনতার পাঠ দিতে। নব্বইয়ে পৌঁছেও স্বামীর স্থাপন করা স্কুলে এসে মেয়েদের বলে গেলেন, আগে পড়া, তারপর বিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০০:০৬
Share: Save:

কৈশোর পেরোনোর আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বুঝেছিলেন কমবয়সে বিয়ের কুফল। স্বামীর সঙ্গে তাই ব্রতী হয়েছিলেন এলাকার মেয়েদের শিক্ষিত করতে, সচেতনতার পাঠ দিতে। নব্বইয়ে পৌঁছেও স্বামীর স্থাপন করা স্কুলে এসে মেয়েদের বলে গেলেন, আগে পড়া, তারপর বিয়ে।

তিনি ইন্দুমতী কর। তাঁর স্বামী কালীদাস করের উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল হাটকীর্তিনগর বালিকা বিদ্যালয়ের। গুসকরা পুর এলাকা বাদ দিলে আউশগ্রাম থানার মধ্যে একমাত্র বালিকা বিদ্যালয় এটি। শনিবার ওই স্কুলে কালীদাসবাবুর মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে এসে ইন্দুমতীদেবী বলেন, ‘‘তোমরা কেউ বড় না হয়ে বিয়ে কোরো না। ভালো করে পড়াশোনা শেখো। তোমাদের পড়াশোনার জন্যেই তিনি এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই স্কুল ছিল তাঁর ধ্যান, জ্ঞান, স্বপ্ন- সবকিছু।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রান্তিকা মিদ্যা জানান, স্কুলে প্রায় ৩৫০ ছাত্রী রয়েছে। বেশির ভাগই পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের এবং প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। মাঝেমাঝে ছাত্রীদের বিয়ের খবরও পান তাঁরা। তাই মেয়েদের বাঁচাতে নিয়মিত সচেতনতায় অস্ত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদের প্রতিষ্ঠা করা এই এলাকায় মেয়েদের শিক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। হাল ধরতে এগিয়ে এসেছিলেন রমেন্দ্রনাথ কোঁয়ার, গদাধর মুখোপাধ্যায়, বিশ্বেশ্বর দত্তদের মতো কিছু মানুষ। তাঁদের পুরোধা ছিলেন কালীদাস কর। বালিকা বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা জয়ন্তী পাল জানান, তাঁরা গ্রামে গ্রামে ভিক্ষে করে স্কুলের টাকা জোগাড় করেছিলেন। পড়ুয়া খুঁজতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। জয়ন্তীদেবী জানান, তাঁদের দেখলেই অভিভাবক এবং মেয়েরা লুকিয়ে পড়ত, যাতে স্কুলে পাঠাতে না হয়। কিন্তু তাঁরাও দমে যাওয়ার লোক ছিলেন না। শেষমেশ স্কুলের অনুমোদন মেলে ১৯৬৫ সালে।

এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির আউশগ্রাম ১-এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন, ‘‘অল্পবয়সে বিয়ে বন্ধের অন্যতম উপায় হল সচেতনতা গড়ে তোলা। ইন্দুমতীদেবী সেই কাজটাই করেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ।’’ স্কুলে শিক্ষিকা কম থাকার বিষয়টিও বিবেচনার আশ্বাস দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor Marriag Girl Child Marry Ayush Gram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE