Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পরপর দু’দিন মদ খেলে বাড়িতে হানা মহিলাদের

যে গ্রামে পা দিলেই চোলাইয়ের গন্ধ নাকে এসে ঠেকত, সেই গ্রামে চোলাই তৈরি তো দূর, বিক্রিই নিষিদ্ধ।

ধৃত আন্নার বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত আন্নার বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গলসি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫২
Share: Save:

যে গ্রামে পা দিলেই চোলাইয়ের গন্ধ নাকে এসে ঠেকত, সেই গ্রামে চোলাই তৈরি তো দূর, বিক্রিই নিষিদ্ধ। কেউ পরপর দু’দিন মদ খেলেও তার বাড়ি গিয়ে হাজির হন গ্রামের মহিলারা। তাঁদের একটাই কথা, ‘‘যে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তা আর ফিরে আসতে দেব না।’’

গ্রামের নাম রামগোপালপুর-করকনা। ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি গলসির এই গ্রামেই বিষ মদ খেয়ে মারা গিয়েছিলেন ৮ জন। তাঁদের মধ্যে গ্রামেই মারা যান ছ’জন। হাসপাতালে ভর্তি ৩২ জনের মধ্যে পরে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় চোলাই মদ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা আন্না বাউরিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগণার সংগ্রামপুরে বিষ-মদ কান্ডে ১৭২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নূর আলম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা-সহ ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হওয়ায় আশার আলো দেখছেন গলসির গ্রামের বাসিন্দারাও।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চার্জশিটে বলা হয়েছে চোলাইয়ের সঙ্গে দেশি মদ বিক্রি করত আন্না। ঘটনার আগের দিন রাতে মদের নেশা আরও বাড়াতে ‘নেশাবর্ধক’ ওষুধও মিশিয়েছিল। তাতেই বিপত্তি ঘটে। নির্দিষ্ট সময়ে চার্জশিট জমা পড়ায় জেলে থেকেই বিচার প্রক্রিয়ায় যোগ দিচ্ছে ধৃত। বর্ধমান জেলা আদালতে ওই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্বও শুরু হয়েছে। ধৃত আন্নার বউদি রুপা বাউরি, ভাই চাঁদু বাউরিরা বলেন, “আমাদের চরম শিক্ষা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে মদ তৈরি পুরোপুরি বন্ধ।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই গ্রামের বাউরি পাড়ায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মদ তৈরি হত। ওই ঘটনার পর থেকে তাঁরা পিছিয়ে এসেছেন। ধনঞ্জয় বাউরি, গোপাল বাউরিরা জানান, সব মদের ঠেক ভেঙে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও অনেকে নতুন করে ব্যবসা শুরুর উদ্যোগ করেছিলেন। কিন্তু গ্রামের মানুষরা একজোট হতেই তাঁরা পিছিয়ে যান। এখন ওই সব পরিবারই মদ-বিরোধী অভিযানে সামিল হন। জবা বাউরি, সুনীতি বাউরিরা বলেন, “গুড় পচিয়ে চোলাই তৈরি হয়। কোনও বাড়িতে পরপর দু’দিন বেশি পরিমাণে গুড় নিয়ে যাওয়ার খবর পেলেই আমরা সেই বাড়িতে হানা দিই।’’ দীপা বাউরি, সুনীতি বাউরিদের দাবি, “কোনও পুরুষ পরপর দু’দিন মদ খেয়ে এসেছে জানতে পারলেই আমরা গিয়ে শাঁসিয়ে আসি। তবে কী জানেন, ৮টা জীবন চলে যাওয়ার পর আমাদের হুঁশ ফিরল।’’ লোয়া- রামগোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পম্পা রুইদাস বলেন, ‘‘শুধু করকোনা বা রামগোপালপুর নয়, এলাকার কোনও গ্রামেই মদ তৈরি হয় না। কেউ লুকিয়ে করলেও খবর পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করি। প্রয়োজনে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।’’

মৃতের পরিজন সুকুমার বাউরি, শম্ভু বাউরিদের আশা, “খোঁড়া বাদশার মতোই আন্নাকে সাজা দিক আদালত। সরকার আমাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আন্না সাজা পেলে মনের জ্বালা মিটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Liquor Galsi গলসি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE