Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাপ তৈরিতেই হামলা, দাবি

এ দিন ঘটনার তদন্তে পুলিশ তপসিতে গেলে গ্রামবাসীরা প্রায় দু’ঘণ্টা তদন্তকারীদের ঘেরাও করে রাখেন বলে জানা যায়। বাসিন্দাদের দাবি, পুনর্বাসন ছাড়া খনি চলতে দেওয়া হবে না।

কাজ বন্ধ: হামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ দেখাল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি। বুধবার জামুড়িয়ার নর্থ সিহারসোল খোলামুখ খনি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

কাজ বন্ধ: হামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ দেখাল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি। বুধবার জামুড়িয়ার নর্থ সিহারসোল খোলামুখ খনি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৮
Share: Save:

খনিকর্মীদের মারধরে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। এই দাবিতে বুধবার জামুড়িয়ায় ইসিএলের কুনস্তোরিয়া এরিয়ার নর্থ সিহারসোল খোলামুখ খনিতে কাজ বন্ধ রেখে দিনভর বিক্ষোভ দেখাল সিটু, কেকেএসসি, ন্যাশনাল কোল ওয়ার্কার্স কংগ্রেস এবং বিএমএস। কিন্তু খনিতে ‘গোলমাল’ কেন, তা নিয়ে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে গ্রামবাসী ও খনি কর্তৃপক্ষের।

খনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে তপসি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ তাণ্ডব চালান। সিটু নেতা কলিমুদ্দিন আনসারি, কেকেএসসি নেতা লালু মাজিদের ক্ষোভ, ‘‘এক বছরের মধ্যে পাঁচ বার এমন ঘটনা হল। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। তা ছাড়া কাজ করা অসম্ভব।’’

এ দিন ঘটনার তদন্তে পুলিশ তপসিতে গেলে গ্রামবাসীরা প্রায় দু’ঘণ্টা তদন্তকারীদের ঘেরাও করে রাখেন বলে জানা যায়। বাসিন্দাদের দাবি, পুনর্বাসন ছাড়া খনি চলতে দেওয়া হবে না। স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মাজি, রেখা মাজিদের দাবি, ‘‘খনিতে বিস্ফোরণের জেরে ঘরবাড়ি কাঁপে। ফাটল ধরছে। বাড়ির শিশু খাট থেকে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। পুনর্বাসন না দিলে বেঁচে থাকাটাই এখন কঠিন।’’ তপসি গ্রাম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভয় গড়াইয়ের দাবি, মিড-ডে মিলের রান্নার সময়ে খাবারে কয়লার
গুঁড়ো মিশছে।

তবে এ দিন সকালে এরিয়ার পার্সোনেল ম্যানেজার আবির মুখোপাধ্যায়, নিরাপত্তা আধিকারিক পীযূষ সিংহ, নর্থ সিহারসোল খনির এজেন্ট স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায়েরা গ্রামের ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বাড়িগুলি পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে আবিরবাবুর বক্তব্য, ‘‘বুঝতে পারা যায়নি, বিস্ফোরণের জেরে নাকি, অনেক পুরনো বলে বাড়িগুলিতে ফাটল ধরেছে। আমরা অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছি। প্রয়োজনে গ্রামবাসী নিজেরাই দেখুন, কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের জেরে তেমন কিছু বিপত্তি ঘটছে না।’’

যদিও এ সব গোলমালের নেপথ্যে কয়লা-চুরির যোগ রয়েছে বলেও খনিকর্মীদের একাংশের মত। খনিকর্মীদের একাংশ জানান, খনির কয়লা চুরি হচ্ছে। এমনকি, কয়েক জন বাসিন্দা দাবি জানিয়েছেন, তাঁদের নিয়মিত দু’গাড়ি কয়লা দেওয়া হোক। কিন্তু তা কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলে জানান ওই খনিকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই খনিকর্মীদের বক্তব্য, ‘‘কয়লা চুরি রুখতে যাতে পদক্ষেপ না করা হয়, তার জন্য হামলা চালিয়ে ‘চাপ’ সৃষ্টি করা হচ্ছে আমাদের উপরে।’’ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে গ্রামবাসী।

খনি সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১০-এর আগে নর্থ সিহারসোল ভূগর্ভস্থ খনি চালু ছিল। খনির অদূরে বেআইনি খননের জেরে বিপন্ন হয়ে পড়ে সেই খনির ভবিষ্যৎ। প্রধানত কয়লা-চুরির কারণে সেই খনি বন্ধ করে খোলামুখ খনি চালু করতে হয়। খনি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আচমকা কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফি দিন ৬০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE