Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাকে খুনে গ্রেফতার ছোট ছেলে

শুক্রবার ধৃতকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্বনাথকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

অভিযুক্ত। নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সালানপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

টাকার লোভেই মাকে খুন করা হয়েছে, রূপনারায়ণপুরে বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমে এমনটাই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বন্ধ বাড়ি থেকে নিয়তি সাহা (৬৮) নামে এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বৃদ্ধার ছোট ছেলে বিশ্বনাথ সাহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুক্রবার ধৃতকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্বনাথকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, টাকা চেয়েও না পেয়ে এই খুন করে থাকতে পারেন ওই ব্যক্তি।’’

কিন্তু কী কী ‘প্রমাণ’-এর ভিত্তিতে এই গ্রেফতারি? তদন্তকারীরা জানান, মূলত পাঁচটি সূত্র হাতে এসেছে। প্রথমত, এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিশ্বনাথকে বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে, এমনকি বাড়িতে তালা লাগাতে দেখা গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় দেহ উদ্ধারের পরে তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, মনে হচ্ছে, ২৪ ঘণ্টা আগে খুন হয়েছেন নিয়তিদেবী। ধৃতের মোবাইল ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিশ্বনাথ ওই এলাকাতেই ছিলেন। তৃতীয়ত, ওই বাড়ি থেকে রক্তমাখা একটি জামা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জামাটি ধৃতেরই। যদিও বিশ্বনাথ জেরায় তা স্বীকার করেননি বলে জানা গিয়েছে। চতুর্থত, বিশ্বনাথের সঙ্গে কোনও বিষয়ে নিয়তিদেবীর প্রায়শই ঝগড়া হত বলে স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে। পঞ্চমত, বৃহস্পতিবার দুপুরে তালা ভাঙার আগে অভিযুক্তকে তাঁর দাদা বারবার ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠান। কিন্তু বিশ্বনাথ আসতে চাননি। যদিও এলাকার কয়েক জন পরে বিশ্বনাথকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন। যদিও জেরায় ধৃত খুনের কথা অস্বীকার করেছেন বলে তদন্তকারীরা জানান।

তবে মৃতের বড় ছেলে অশোককেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে না বলে জানান তদন্তকারীরা। তাঁকেও লাগাতার জেরা করা হচ্ছে। শুক্রবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়তিদেবীর দেহের ময়না-তদন্তের পরে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের সৎকার করেছেন বড় ছেলে অশোকই।

খুনের কারণ হিসেবে, টাকা সংক্রান্ত কোনও গোলমালের বিষয়ই রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। কেন এমন মনে হওয়া? তদন্তকারীরা জানান, স্বামীর পেনশন বাবদ নিয়তিদেবী ফি মাসে মোটা টাকা পেতেন। সেই টাকার ভাগ পাওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রায়ই গোলমাল হত। শুধু তাই নয়, মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুই ভাইয়ের কেউ এক জন বাড়ি বিক্রি করতেও নিয়তিদেবীকে চাপ দিচ্ছিলেন বলে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ। এ ছাড়া সপ্তাহখানেক আগে নিয়তিদেবীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

পুলিশ জানায়, ওই টাকা নিজের প্রয়োজনে নিয়তিদেবী নিজেই তুলেছিলেন, না কি দুই ছেলের কেউ টাকা তুলতে বাধ্য করেছিলেন, এ সব বিষয়ে এখনও ধন্দ কাটেনি। এডিসিপি (পশ্চিম) অনিমত্রবাবু বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে সব দিক খোলা রেখেই
আমরা এগোচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Murder Son Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE