Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্বীর ঝোঁকে নদীর জলে

মন্দিরে তেমন ভিড় না থাকায় দ্রুত পুজো সেরে পরিবারের সদস্যরা মন্দির চত্বরে ঘুরছিলেন। বাড়িরই কয়েক জনের সঙ্গে বিবেক মন্দিরের পিছনের দিকে নুনিয়া নদীর পাড়ে বেড়াতে যান। সেই সময়েই বিপত্তি ঘটে

উদ্ধারকাজ: বুধবার ঘাগরবুড়ি মন্দির লাগোয়া নুনিয়া নদীতে যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ছবি: পাপন চৌধুরী

উদ্ধারকাজ: বুধবার ঘাগরবুড়ি মন্দির লাগোয়া নুনিয়া নদীতে যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ছবি: পাপন চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

ফের নিজস্বীর নেশা প্রাণ কাড়ল আসানসোলে। বুধবার আসানসোল দক্ষিণ থানার ঘাগরবুড়ি মন্দির লাগোয়া নুনিয়া নদীর পাড়ে নিজস্বী তুলতে গিয়ে পা হড়কে জলে তলিয়ে যান বিবেক চন্দ্রবংশী (২৪)।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ সপরিবার অণ্ডালের বাসিন্দা বিবেক ঘাগরবুড়ি মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন। মন্দিরে তেমন ভিড় না থাকায় দ্রুত পুজো সেরে পরিবারের সদস্যরা মন্দির চত্বরে ঘুরছিলেন। বাড়িরই কয়েক জনের সঙ্গে বিবেক মন্দিরের পিছনের দিকে নুনিয়া নদীর পাড়ে বেড়াতে যান। সেই সময়েই বিপত্তি ঘটে। যুবকের সঙ্গে থাকা তাঁর জামাইবাবু সন্দীপ রওয়ানি বলেন, ‘‘বিবেক আচমকা নদীর পাড়ে গিয়ে মোবাইলে নিজস্বী তুলতে শুরু করে। তখনই পা হড়কে নদীতে পড়ে যায়।’’ ওই জায়গায় জলের প্রচণ্ড স্রোত ও ঘুর্ণি থাকায় নিমেষে মধ্যে তলিয়ে যান বিবেক।

ঘটনার খবর যায় পুলিশ ও দমকলের কাছে। খানিক বাদেই পুলিশ, দমকল ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি শুরু করেন। দুপুর ৩টে নাগাদ জল থেকে দেহ তোলা হয়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই যুবক কলেজের পাঠ শেষ করে এই মুহূর্তে চাকরির খোঁজ করছিলেন।

পুলিশ জানায়, বুধবার যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে প্রায়ই নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই অঞ্চলে নদীটি মূলত বড় বড় পাথরের খাঁজের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে। অন্য জায়গার তুলনায় এখানে নদী বেশ কিছুটা গভীর। প্রচণ্ড স্রোত ও ঘুর্ণির কারণে ওই এলাকায় জলে পড়ে গেলে সাঁতার জানলেও বেঁচে ফেরা প্রায় অসম্ভব বলেই জানান পুলিশকর্মীরা। এ দিন দমকল ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীদের সঙ্গে তলিয়ে যাওয়া যুবককে উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন মন্দিরের দুই স্বেচ্ছাসেবক ভিম বাস্কি ও মঙ্গল হাঁসদা। তাঁরা জানান, এই অংশে নদী কতটা বিপজ্জনক, তা উপর থেকে বোঝার উপায় নেই।

বিপজ্জনক এলাকা হওয়ায় নদীর পাড়ে সাধারণের যাতায়াত রুখতে সতর্কীকরণ বোর্ড লাগানো হয়েছে। লোহার বেড়াও দেওয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় ভেঙে যায় লোহার বেড়া। ঘাগরবুড়ি সোবাইত সমিতির সম্পাদক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরাও সাধারণ মানুষকে নদীর পাড়ে যেতে নিষেধ করেন। এ দিনও ওই যুবক ও তাঁর সঙ্গীদের সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি নিষেধ শোনেননি।’’

নিজস্বীর নেশায় বিপত্তি, এই শহর-সহ রাজ্য ও দেশের নানা প্রান্তে বার বার ঘটেছে। এর আগে নিজস্বী-নেশা প্রাণ যাওয়ার ঘটনার সাক্ষী থেকেছে আসানসোলও। গত বছর অগস্টের শেষ দিকে আসানসোলের বাসিন্দা খড়্গপুর আইআইটি-র এক শিক্ষক খড়্গপুরেই একটি পাথর-খাদানের সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলতে যান। তখন তাঁর ছেলে জলে পড়ে যায়। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে জলে পড়েন শিক্ষকও। শেষমেশ ছেলে বেঁচে গেলেও মৃত্যু হয় বাবার। শুধু তাই নয়, মাসখানেক আগে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে নিজস্বী তোলা ও তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার প্রবণতাকে ‘মানসিক বৈকল্য’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছিলেন ব্রিটেনের নটিংহ্যাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদুরাইয়ের থিয়াগরাজার স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট-এর গবেষকেরা। গবেষণার জন্য তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন ভারতকেই।

কিন্তু শহরবাসীর আক্ষেপ, নিজস্বী-নেশায় একের পর এক প্রাণ যাওয়ার ঘটনা সামনে আসার পরেও হুঁশ ফিরছে না নাগরিকদের একাংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth River Selfie Drown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE