Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চাকরির নামে প্রতারণা, ঝুলন্ত মৃতদেহ যুবকের

আমগাছে ঝুলন্ত দেহ মিলেছে এক যুবকের। তবে ওই যুবকের বাড়ির লোকজনেদের অভিযোগ, সরকারি চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের একটি দালাল চক্র ওই যুবকের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার জেরেই এই ঘটনা। মঙ্গলবার সকাল পূর্বস্থলীর সুলুন্টু এলাকা থেকে ওই দেহ উদ্ধার হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

আমগাছে ঝুলন্ত দেহ মিলেছে এক যুবকের। তবে ওই যুবকের বাড়ির লোকজনেদের অভিযোগ, সরকারি চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে নদিয়ার কৃষ্ণনগরের একটি দালাল চক্র ওই যুবকের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার জেরেই এই ঘটনা। মঙ্গলবার সকাল পূর্বস্থলীর সুলুন্টু এলাকা থেকে ওই দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম প্রসেনজিত্‌ মিস্ত্রী (৩০)। বাড়ি নদিয়ার প্রতাপনগর এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতাপনগর এলাকায় একটি সংস্থায় এমব্রয়ডারির কাজ করতেন প্রসেনজিত্‌। তবে জিমন্যাস্টিকে দক্ষতার জন্যই এলাকায় বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। জিমন্যাস্টিকে জেলা এবং রাজ্য ভিত্তিক প্রতিযোগিতায়ও যোগ দেন। প্রসেনজিতবাবুর দাদা প্রণয় মিস্ত্রীর অভিযোগ, টানাটানির সংসারে কৃষ্ণনগরের এক দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ভাই। সর্বশিক্ষা মিশনের ক্রীড়া প্রশিক্ষকের সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম রপে বেশ কিছু টাকাও চায় তারা। প্রণয়বাবুর দাবি, “ওই দালালদের সঙ্গে ভাইকে পরিচয় করিয়ে দেন এলাকারই এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তিনিই জানান, এ ভাবে এলাকার অনেকেই চাকরি পেয়েছে। এতে ভাইয়ের বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।” তাঁর দাবি, দালালেরা শর্ত দেয় প্রথমে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাক্যাউন্টে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। টাকা জোগাড় করতে ভাইকে স্ত্রীর গহনা বিক্রি করতে হয়। ধার নিতে হয় ওই এমব্রয়ডারি সংস্থার মালিকের কাছেও। টাকা দেওয়ার মাসখানেক পরে ওই দালালেরা প্রসেনজিতবাবুকে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে একটি শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষার আসরে নিয়ে যায়। তবে পরে তারা জানিয়ে দেয় পরীক্ষায় ভাই উত্তীর্ণ হতে পারে নি। প্রণয়বাবুর দাবি, এরপরে ভাই কিছুটা ভেঙে পড়ে। দালালদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু টাকা ফেরত চাইলে ওই দালালেরা জানায়, আরও ৮০ হাজার টাকা তাদের অ্যাক্যাউন্টে পাঠালে তারা তাঁকে মোট সাড়ে তিন লক্ষ টাকা একসঙ্গে ফেরত দিয়ে দেবে। একথা শুনে আরও ৮০ হাজার টাকা জোগাড় করতে শুরু করেন প্রসেনজিত্‌বাবু। এলাকার এক ব্যাবসায়ী তাকে ওই টাকা ধার হিসাবে দেন। প্রণয়বাবুর দাবি, সোমবার দালালদের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পাঠানোর জন্য ভাই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নবদ্বীপের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যায়। বিকেল তিনটে নাগাদ টেলিফোনে জানায় ব্যাঙ্কেই রয়েছে সে। তবে সন্ধ্যার পর থেকেই প্রসেনজিত্‌বাবুকে আর ফোনে পাওয়া যায় নি বলে প্রণয়বাবুর দাবি। রাতেও ফেরেননি তিনি। পরে সকালে তাঁরা জানতে পারেন, বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে পূর্বস্থলী এলাকার একটি আমবাগানে ভাইয়ের দেহ মিলেছে। প্রণয়বাবুর দাবি, ভাইয়ের মৃত্যু সন্দেহজনক। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই সব ঘটনা জানা যাবে।

প্রসেনজিত্‌বাবুর স্ত্রী রূপাদেবীও জানান, চাকরি পাওয়ার জন্য টাকা দিতে হচ্ছে এ কথা তাঁকে জানিয়েছিলেন স্বামী। কিন্তু কাকে, কিভাবে টাকা দেওয়া হচ্ছে তা কখনও বলেননি। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতে পারছি না ওকে এভাবে দেখতে হবে।” প্রতাপনগর এলাকার বাসিন্দা বিধুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “ভাল ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিল প্রসেনজিত্‌। ওর মৃত্যু রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। কী কারনে এমন ঘটল তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।” জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE