Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চোর সন্দেহে খুন, পাল্টা আগুন

বাড়িতে চুরি হয়েছিল মাস দেড়েক আগে। তার পর থেকে এলাকায় দেখা না যাওয়ায় সন্দেহ গিয়ে পড়ে পাড়ার এক যুবকের উপরে। বৃহস্পতিবার হঠাৎ তাঁকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে পাকড়াও করে শুরু হয় মারধর। ঘণ্টা দুয়েক ধরে নৃশংস অত্যাচারে মৃত্যু হল ওই যুবকের। আর তার জেরে এ দিন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল কুলটির শিয়ালডাঙা এলাকা। মারধরে অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনের বাড়িতে হামলা চালাল নিহতের পড়শি ও পরিজনেরা। পুড়ল বাড়ি-গাড়ি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় বাহিনী নামাতে হল পুলিশকে।

পুড়ে ছাই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত গগন সিংহের গাড়ি। নেভাচ্ছে দমকল।

পুড়ে ছাই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত গগন সিংহের গাড়ি। নেভাচ্ছে দমকল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কুলটি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩১
Share: Save:

বাড়িতে চুরি হয়েছিল মাস দেড়েক আগে। তার পর থেকে এলাকায় দেখা না যাওয়ায় সন্দেহ গিয়ে পড়ে পাড়ার এক যুবকের উপরে। বৃহস্পতিবার হঠাৎ তাঁকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে পাকড়াও করে শুরু হয় মারধর। ঘণ্টা দুয়েক ধরে নৃশংস অত্যাচারে মৃত্যু হল ওই যুবকের। আর তার জেরে এ দিন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল কুলটির শিয়ালডাঙা এলাকা। মারধরে অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনের বাড়িতে হামলা চালাল নিহতের পড়শি ও পরিজনেরা। পুড়ল বাড়ি-গাড়ি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় বাহিনী নামাতে হল পুলিশকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিয়ালডাঙার তিনধাওড়ার বাসিন্দা, বার্নপুর ইস্কোর কর্মী গগন সিংহের বাড়িতে তালা ভেঙে চুরি গিয়েছিল বেশ কিছু জিনিসপত্র। সেই ঘটনায় পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে। আবার তার পর থেকেই এলাকায় দেখা যাচ্ছিল না স্থানীয় বাসিন্দা পান্ডু রুইদাসকে (২৬)। পুলিশ জানিয়েছে, পান্ডুর বিরুদ্ধে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রাখা-সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ওই সময়েই তেমন একটি মামলায় ধরা পড়ায় পান্ডুর জেল হয়। তা জানা ছিল না গগনদের। তারা সন্দেহ করে, চুরির সঙ্গে পান্ডু জড়িত। দিন তিনেক আগে জামিন পেয়ে আসানসোলের জেল থেকে এলাকায় ফেরেন পান্ডু। এ দিন সকালে তিনি রাস্তায় বেরোতেই গোলমাল শুরু হয়।

নিহতের পরিবারের লোকজন পুলিশে অভিযোগ করেন, সকাল ৮টা নাগাদ রাস্তায় পান্ডুকে পিছমোড় করে বেঁধে মারধর শুরু করে গগন ও তার সঙ্গী শম্ভু সাউ-সহ কয়েক জন। লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক মারা হয়। শাবল দিয়ে খোঁচানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, এলাকার কয়েক জন নিরস্ত করতে গেলে অভিযুক্তেরা তাঁদের চড়-থাপ্পড় মেরে হঠিয়ে দেয়। যুবকের বাড়ির লোকজন প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মারের চোটে ছটফট করতে থাকা যুবকটি জল চাইলেও দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

এর পরেই এলাকা তেতে ওঠে। নিহতের পাড়া-পড়শিরা হাজির হন। বেগতিক বুঝে অভিযুক্তেরা ও তাদের বাড়ির লোকজন এলাকা ছেড়ে পালায়। প্রথমে হামলা হয় গগন সিংহের বাড়িতে। আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। পোড়ানো হয় গগনের গাড়ি। তার পরে তারা চড়াও হয় শম্ভু সাউয়ের বাড়িতে। সেখানে ভাঙচুর চলাকালীন পুলিশ পৌঁছয়। অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় বাহিনী নিয়ে পৌঁছন আসানসোল-দুর্গাপুরের এসিপি (পশ্চিম) অভিষেক রায়।

গোটা ঘটনায় রীতিমতো স্তম্ভিত শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। এ দিনের ছবি তাঁদের মনে করিয়ে দিয়েছে বছর পাঁচেক আগে হিরাপুরের এক ঘটনা। এক শিশুকে ধাক্কা মারায় লরি চালক অবোধ সিংহকে রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে শিশুটির বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার পরেও প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ।

এ দিন নিহত যুবকের মা চাঁদমনি রুইদাস দাবি করেন, “আমার ছেলে যদি চুরির সঙ্গে সত্যি জড়িত থাকে তবে তাকে পুলিশের হাতে দেওয়া হল না কেন? এ ভাবে যারা তাকে খুন করল তাদের শাস্তি চাই।” কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “ছেলেটা মা-মা বলে চিৎকার করছিল। আমি ওদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলাম। আমাকেও ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল।” প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গগন সিংহ ও শম্ভু সাউ ছাড়াও এই ঘটনায় জড়িত কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতী। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, এখানে প্রতিদিনই আশপাশের এলাকার দুষ্কৃতীরা আস্তানা বাঁধে। সুপ্রভাত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বাসিন্দার কথায়, “গোটা এলাকায় বেশ কিছু মদ-জুয়ার ঠেক আছে। সেখানে বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা রয়েছে।” তাঁর দাবি, এ বিষয়ে বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। আর এক বাসিন্দা সন্দীপ দাস অভিযোগ করেন, মদ-জুয়ার ঠেকগুলিতে প্রায়ই অশান্তি বাধে। তাতে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হয়। তাঁর অভিযোগ, “এ দিন যখন ওই যুবককে মারধর করা হচ্ছিল, তখনই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ গা করেনি। সময় মতো পুলিশ এলে এই ঘটনা রোখা যেত।”

যদিও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা মানতে চাননি কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) অভিষেক রায়। তিনি বলেন, “পুলিশ খবর পেয়েই এসেছে।” এলাকায় মদ-জুয়ার ঠেক চলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে বুধবারই কুলটির নানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রচুর অবৈধ মদ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। শীঘ্রই আবার অভিযান হবে বলে তাঁর আশ্বাস। এসিপি বলেন, “এই খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পাঁচ জনের নাম পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হবে। ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনাতেও মামলা করা হচ্ছে।” এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kulti sialdanga murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE