লোকসান বাড়ছে বিদ্যুত্কেন্দ্রে।—ফাইল চিত্র।
আর্থিক সঙ্কটে পঙ্গু হতে বসা বিদ্যুত্ উত্পাদক সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’কে (ডিপিএল) বাঁচাতে রাজ্যের অন্য সরকারি বিদ্যুত্ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়েছিল ডিপিএলের পরিচালন সমিতি। কিন্তু অন্য সরকারি সংস্থা ডিপিএলকে নেওয়ার ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করছে না। এ দিকে বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যবস্থা তলানিতে ঠেকেছে। লোকসান বাড়ছে দিন-দিন। কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, এমন পরিস্থিতিতে ডিপিএলের ‘জিয়নকাঠি’ হতে পারে যে কোকওভেন প্ল্যান্ট, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সংস্থার সেই বিভাগও দিন দিন রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলি।
ডিপিএল চালু হয় ১৯৬০ সালে। ৩০ মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতার দু’টি ইউনিট ছিল শুরুতে। ১৯৬৪ সালে ৭৭ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট ও তার বছর দুয়েক পরে একই ক্ষমতার আরও একটি ইউনিট গড়ে ওঠে। ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ষষ্ঠ ইউনিটটি গড়ে ওঠে ১৯৮৭ সালে। ২০০৮ সালের মে মাসে যোগ হয় ৩০০ মেগাওয়াটের সপ্তম ইউনিট। প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটটি পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিট উত্পাদনহীন। সেগুলি বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। উত্পাদন খরচ বেশি বলে ষষ্ঠ ইউনিটটি চালানো যায় না। নানা কারণে সপ্তম ইউনিটও প্রায়শয়ই বন্ধ থাকে। আড়াইশো মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অষ্টম ইউনিটটি গত ৯ জুলাই উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ছ’মাস কাটার পরেও সেটিতে এখনও বাণিজ্যিক ভাবে উত্পাদন শুরু হয়নি। গ্রিড থেকে বিদ্যুত্ কিনে তা সরবরাহ করে কাজ চালাচ্ছে ডিপিএল। দিন-দিন বাড়ছে লোকসানের পরিমাণ। চলতি আর্থিক বছরে তা তিনশো কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে কর্মী সংগঠনগুলি।
ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থার ‘কোকওভেন গ্রুপ অব প্ল্যান্ট’ বরাবরই লাভজনক বিভাগ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মী কাজ করেন এই প্ল্যান্টে। এই বিভাগে সাধারণ কয়লা থেকে ল্যাম কোক, হার্ড কোক উত্পাদন করা হয়। উত্পাদিত ল্যাম কোক, হার্ড কোক কিনে নেয় দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি)। আগে এখানে পাঁচটি ব্যাটারি চালু ছিল। কিছু দিন আগেও প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম ব্যাটারিটি কার্যক্ষম ছিল। এখন শুধু পঞ্চম ব্যাটারিটি চালু রয়েছে। ফলে ল্যাম কোক উত্পাদনের পরিমাণও কমে গিয়েছে। ল্যাম কোক উত্পাদনের সময় নির্গত হয় কোল গ্যাস। আগে বিভিন্ন কারখানা কোল গ্যাস কিনত। পরের দিকে শুধু অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট (এএসপি) কোল গ্যাস কিনত। কিন্তু সেই চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আর তা পুনর্নবীকরণ হয়নি। এখন কোল গ্যাস বাতাসে ছেড়ে দেয় ডিপিএল। ফলে, গ্যাস বাবদ যে আয় হত তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
আইএনটিইউসি অনুমোদিত সংগঠন ‘ডিপিএল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক উমাপদ দাসের অভিযোগ, “ডিপিএলের যা পরিস্থিতি তাতে কোকওভেন প্ল্যান্টের উন্নতি করে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ব্যাটারিগুলি সব চালু হলে উত্পাদনের পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ দিকে কোনও নজর নেই।” আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘ডিপিএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর কার্যকরী সভাপতি অমর মণ্ডলেরও অভিযোগ, “ডিপিএল কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনায় গলদ রয়েছে। বিদ্যুত্ উত্পাদনের পিছনে লাগাতার লগ্নি করা হয়েছে। কিন্তু কোকওভেন প্ল্যান্ট নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেই। অথচ, বরাবর এই বিভাগ ডিপিএলকে ‘অক্সিজেন’ জুগিয়ে এসেছে।” শ্রমিক নেতাদের দাবি, সংস্থার স্বার্থে এই বিভাগের দিকে নজর দিন কর্তৃপক্ষ।
ডিপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃণালকান্তি মিত্রের সঙ্গে রবিবার চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, ইস্পাতের বাজারের উপর নির্ভর করে ল্যাম কোকের চাহিদা। কিন্তু বর্তমানে বাজারের তেজি ভাব নেই। কাজেই ব্যাটারিগুলি সব চালু হলে ক্রেতা পাওয়া যাবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। ওই আধিকারিকের কথায়, “২০০৫ সালে তত্কালীন বিদ্যুত্মন্ত্রী মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় এ সব ভেবেই ডিপিএলের নিজস্ব মিনি ইস্পাত কারখানা এবং কোল গ্যাস ব্যবহার করে ডিপিএলের নিজস্ব বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।”
লোকসানে চলা সংস্থায় এখন এ সব ভাবাও অর্থহীন বলে মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy