Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিবেকানন্দের পালঙ্ক নিয়ে টানাটানি

দোমহলা ওই বাড়িতে দিন সাতেক কাটিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। স্মৃতি বলতে রয়েছে এক আরাম কেদারা আর এক পালঙ্ক। পরে আরাম কেদারাটি পাশের গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমকে দিয়ে দেওয়া হলেও পালঙ্কটি এখনও রয়েছে ওই বাড়িতে। বর্ধমানের ভৈটা গ্রামের স্বামীজির ওই শিষ্যের উত্তরপুরুষেরা তার অধিকার ছাড়তে চান না কোনও ভাবেই। আর এ নিয়েই শুরু টানাপড়েন।

ভৈটা গ্রামের মিত্রবাড়িতে রাখা পালঙ্ক।

ভৈটা গ্রামের মিত্রবাড়িতে রাখা পালঙ্ক।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৪
Share: Save:

দোমহলা ওই বাড়িতে দিন সাতেক কাটিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। স্মৃতি বলতে রয়েছে এক আরাম কেদারা আর এক পালঙ্ক। পরে আরাম কেদারাটি পাশের গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমকে দিয়ে দেওয়া হলেও পালঙ্কটি এখনও রয়েছে ওই বাড়িতে। বর্ধমানের ভৈটা গ্রামের স্বামীজির ওই শিষ্যের উত্তরপুরুষেরা তার অধিকার ছাড়তে চান না কোনও ভাবেই। আর এ নিয়েই শুরু টানাপড়েন।

মিত্র বাড়ির উত্তরপুরুষদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি ওই বাড়িতে শিষ্য হরিপদ মিত্র ও মিত্র জায়া ইন্দুমতিদেবীর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁদের আতিথ্য, বাড়ি ও চারপাশের পরিবেশ বিবেকানন্দের এতই ভাল লাগে যে সাতদিন কাটিয়ে দেন ওখানেই। যে ঘরে তিনি থাকতেন সেখানেই ছিল ওই আরাম কেদারা ও পালঙ্কটি। বিশ্রাম নেওয়া, লেখালেখি করা সবই তিনি করতেন ওইখানে। পরে আরাম কেদারাটি পাশের পুতুন্ডা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম পায়। কিন্তু পালঙ্কটি বাড়িছাড়া করতে চান না মিত্রবাড়ির সদস্যেরা।

পতুন্ডা গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমের আচার্য স্বামী মহেশানন্দ বলেন, “হরিপদ মিত্রের সঙ্গে স্বামীজির প্রথম পরিচয় হয় মহারাষ্ট্রের বলগাঁওয়ে। হরিপদবাবু সেখানে বন দফতরের আধিকারিক ছিলেন। পরে বিবেকানন্দমুগ্ধ হরিপদবাবুরা স্বামীজির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। হরিপদবাবুর অনুরোধে তাঁর ভৈটাগ্রামের বাড়িতেও এসেছিলেন স্বামীজি।” আচার্য জানান, শক্তিগড় স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ভৈটা গ্রামে যেতে গিয়ে স্বামীজি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। পথে পুতুন্ডা গ্রামের তত্‌কালীন জমিদার মন্মথ চৌধুরীদের বাড়িতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। বছর ছাব্বিশ আগে সেখানেই গড়ে ওঠে বেলুড় মঠ অনুমোদিত শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম।

পুতুন্ডা থেকে ভৈটার দূরত্বও বেশ খানিকটা। স্বামীজির কষ্ট দূর করতে মন্মথবাবু তাঁর জন্য পাল্কির ব্যবস্থা করেন। পাল্কি চড়েই আলপথে স্বামীজি, ১৯০২ সালের ২২ জানুয়ারি পৌঁছন মিত্র বাড়িতে। ওই বাড়ির উত্তরপুরুষদের অন্যতম, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শান্তিময় দে এখনও মজে রয়েছেন পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শোনা গল্পে। শান্তিবাবু বলেন, “আমার মায়ের দাদু ছিলেন হরিপদ মিত্র। এ বাড়ির নাম তিনিই দেন বিবেক কুটির।” দোমহলা সেই বাড়ি এখন ভেঙে পড়লেও সাবেক স্থাপত্যরীতির আভিজাত্য আজও বর্তমান।

রামকৃষ্ণ আশ্রমে রাখা রয়েছে কেদারাটি।

স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনের আগে, রবিবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একতলার ডানদিকের একটি ঘরের সামনেই রয়েছে বিবেকানন্দের বাঁধানো ছবি। ঘরের ডান দিকে সেই পালঙ্ক। পালঙ্কের একদিকের চালা খসে বিবর্ণ হয়ে গেলেও কাঠের কাজ দেখে ১১৫ বছরের পুরনো ইতিহাস মালুম পড়ে। মিত্রবাড়ির সদস্যদের দাবি, এই পালঙ্ক আশ্রমে নিয়ে যেতে চাইছেন আচার্যেরা।

পুতুন্ডার আশ্রমের আচার্য মহেশানন্দের দাবি, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওই ঘরে রাখা বিবেকানন্দের ব্যবহৃত আসবাবগুলি চাইছি। বিনিময়ে নতুন, দামি আসবাব দিতেও রাজি আমরা। অনেক বলার পরে আরাম কেদারাটি দিলেও পালঙ্কটি দিতে নারাজ তাঁরা। কিন্তু আমরা পালঙ্কটি পেলে আশ্রমে সংরক্ষণ করে রাখব, যাতে বিবেকানন্দের ভক্তেরা দেখতে পান।” আশ্রমের ঘরে গিয়েও দেখা যায়, ওই কেদারাটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে দর্শনের জন্য।

কিন্তু তাঁরা যে পালঙ্কটি দিতে নারাজ তা স্পষ্টই জানিয়েছেন শান্তিবাবুরা। তাঁদের কথায়, “মিত্রবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই মারা যান বিবেকানন্দ। ওই পালঙ্ক আমাদের পারিবারিক সম্পদ। স্বামীজির স্মৃতি তাতে জড়িয়ে রয়েছে। ওটি আমরা আশ্রমকে দিতে পারব না।” তাঁদের দাবি, “কারোও ওই পালঙ্ক দেখার ইচ্ছে হলে আমাদের বাড়ি অবারিত দ্বার। এই বাড়িতেই তো রাশিয়া থেকে একদল গবেষক, কলকাতার ব্রিটিশ কমিশনার আরও অনেকে এসেছেন।” শান্তিবাবুর দাবি, “দাদুদের কাছে শুনেছি, স্বামীজি প্রতিদিন ওই পালঙ্কে বসে লেখালিখি করতেন। ওই পালঙ্ক আমরা হাতছাড়া করতে পারব না।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swami vivekananda palanko rana sengupta burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE