Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বন্ধ কাজ, ক্ষোভ

শতকরা ১০০ ভাগ মজুরি ও বোনাস বৃদ্ধির দাবি করে চিঠি দিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। চারদিনের মধ্যে আলোচনাও চেয়েছিলেন। মালিকপক্ষ আলোচনায় বসতে রাজি ছিলেন ১ মার্চ। কিন্তু ততদিন অপেক্ষা না করে বর্ধমানের তিনটি ব্যবসা কেন্দ্রে সোমবার থেকে পণ্য খালাস বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকেরা।

নতুনগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভে আটকে ট্রাক।—নিজস্ব চিত্র।

নতুনগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভে আটকে ট্রাক।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৭
Share: Save:

শতকরা ১০০ ভাগ মজুরি ও বোনাস বৃদ্ধির দাবি করে চিঠি দিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। চারদিনের মধ্যে আলোচনাও চেয়েছিলেন। মালিকপক্ষ আলোচনায় বসতে রাজি ছিলেন ১ মার্চ। কিন্তু ততদিন অপেক্ষা না করে বর্ধমানের তিনটি ব্যবসা কেন্দ্রে সোমবার থেকে পণ্য খালাস বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকেরা। ফলে কোটি কোট টাকা লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ বর্ধমানের বোরহাট, নতুনগঞ্জ ও আলমগঞ্জের ব্যবসায়ীদের। ওই জায়গাগুলিতে অসংখ্য পণ্যভর্তি ট্রাক দাঁড়ইয়ে রয়েছে। বাধ্য হয়ে মালিকেরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই ধর্মঘটের পিছনে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর মদত রয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রের খবর। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “আমরা শ্রম কমিশনারকে ওই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলব।”

বর্ধমানের ওই তিনটি কেন্দ্রে প্রতিদিন বাইরে থেকে পণ্য নিয়ে অসংখ্য ট্রাক আসে। ট্রাকগুলি থেকে পণ্য নামান ঠিকা মজদুরেরা। বস্তা পিছু মাল তোলা বা নামানোর জন্য ২ টাকা ও টিন পিছু ১ টাকা করে মজুরি পান তাঁরা। কিন্তু গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি শেখ এনায়েতুল্লা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, তাঁদের ১১ দফা দাবি রয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ১০০ ভাগ মজুরি ও বোনাস বৃদ্ধি, মেডিক্লেমের সুবিধা, ১৫ মাস অন্তর চুক্তির নবীকরণ, বছরে ১০ দিন ছুটি, ছুটির দিন বা সন্ধ্যা ছ’টার পরে কাজ করালে দেড়গুন মজুরি, কর্মরত শ্রমিকের মৃত্যুতে এককালীন ৮০ হাজার টাকা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা অবসরকালীন ভাতার দাবি করেন তাঁরা।

তবে মালিকপক্ষের দাবি, অবিলম্বে আলোচনা না করলে পণ্য খালাস বন্ধ করার কোনও কথা বলা হয়নি ওই চিঠিতে। ফলে আচমকা কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে ছোট ও বড় মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক ব্যবসা কেন্দ্র। দু’দিন পণ্য খালাস বন্ধ থাকার পরে ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বর্ধমান থানা ইত্যাদি জায়গায় চিঠি দিয়ে ঘটনার কথা জানান। ব্যবসায়ীদের নেতা গৌতম দাস, মদন দে, সুকান্ত সিংহদের অভিযোগ, সোমবার থেকে ওই শ্রমিকেরা কোনও কারণ না জানিয়ে বিনা বিজ্ঞপ্তিতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। তাঁদের আরও দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ওই তিন ব্যবসাকেন্দ্র থেকে প্রচুর পরিমানে গুড়, চিনি, আটা, ময়দা, তেল, ঘি, ডাল-সহ নানা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হয়। সরবরাহ বন্ধ থাকায় দাম বাড়তে পারে ওই সব সামগ্রীর। কোথাও কোথাও না পাওয়ারও সমস্যা দেখা যেতে পারে। তবে এর দায় নিতে রাজী নন তাঁরা।

এ দিকে ওই শ্রমিকদের অভিযোগ, গত ছ’মাস ধরে ওই দাবিগুলি মালিকপক্ষের কাছে জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু মালিকেরা কর্ণপাত করেননি। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে চন্দন সাউ, কৈলাস মাহাতো, সঞ্জীব কর্মকারেরা জানান, মালিকেরা আলোচনার নির্দিষ্ট দিন ধার্য না করায় বাধ্য হয়ে তাঁদের মাল খালাস বন্ধ রেখেছেন। তাঁদের দাবি, সকাল সাতটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত তাঁদের পণ্য খালাসের কাজ করতে হয়। যে মজুরি মেলে তা দিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে বিনা বিজ্ঞপ্তিতে এভাবে পণ্য খালাস বন্ধ করে দেওয়ায় তৃণমূলের নেতা তথা পুরসভার প্রভাবশালী কাউন্সিলার খোকন দাস বিরক্ত। তিনি বলেন, “এভাবে কোনও কাজ বন্ধ করিয়ে দেওয়া যায় না। শ্রমিকেরা একতরফা ধর্মঘট শুরু করায় আমি মালিকদের বলেছি, প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানাতে।”

স্থানীয় ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার তথা শ্রমিক নেতা শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওই ধর্মঘট যাঁরা করেছেন তাঁরা আইএনটিটিইউসি-র কেউ নন। কোনও ভুঁইফোড় তৃণমূল নেতা হয়তো এতে যুক্ত। আমরা ওই শ্রমিক-মালিক বৈঠকে উপস্থিত থেকে সমস্যা মেটাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে শ্রমিকেরা রাজি হননি।” তাঁর দাবি, “যেহেতু আমাদের শ্রমিক সংগঠন এতে যুক্ত নয়, তাই আমারও মাথাব্যথা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

labour wages burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE