টাকা মেলে না। তবু আশা মরে কই!
রাজ্য সরকার অর্থ মঞ্জুর না করায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাতা দেওয়া বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ পাঁচ মাস। তার উপরে প্রায় চার বছর ধরে বরাদ্দ কোটার একটিও ফাঁকা না হওয়ায় নতুন করে ভাতার তালিকায় আর কেউ ঢোকেননি। তবু বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য আবেদনপত্র নিতে লাইনের বিরাম নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে ফর্ম নিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মহিলা, প্রতিবন্ধী সকলেই। আর এ সব ভাতা পেতে প্রয়োজনীয় আয় ও ঠিকানার শংসাপত্র দিতে গিয়ে নাজেহাল দশা পুরসভার কাউন্সিলরদেরও। তাঁদের কাছেও নিত্য দিন শংসাপত্র নিতে ভিড় করছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
এমনটাই অবস্থা হাওড়া পুরসভা এলাকায়। নিয়ম অনুযায়ী বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দেয় জেলা সমাজকল্যাণ দফতর। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তিনটি ক্ষেত্রে ভাতার জন্য প্রতিটি পুরসভা এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেওয়া আছে। সেই সংখ্যার বেশি আর কাউকে ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত করা যায় না। হাওড়া পুর-এলাকায় যেমন বার্ধক্য ভাতার জন্য ৭৮৫ জন, বিধবা ভাতার জন্য ৫৪৪ জন এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫৪১ জনের কোটা রয়েছে।
সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, গত ২০১১ সাল থেকে রাজ্য এই ভাতা চালু করে। তিনটি ক্ষেত্রেই প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা করে ভাতার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। এই টাকা পাওয়ার জন্য পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোটা ঠিক করে দেওয়া হয়। জেলা সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, ২০১১-এ ভাতা ঘোষণার পরেই হাওড়া পুর-এলাকায় নির্দিষ্ট সব কোটা পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু কোটায় তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদনপত্র দেওয়া বন্ধ করার কোনও সরকারি নির্দেশ না থাকায় এখনও প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে এই ফর্ম বিলি করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, আমৃত্যু এই ভাতা পাওয়ার জন্য প্রার্থীকে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে আয় ও ঠিকানার শংসাপত্র দিতে হয়। ভাতার জন্য আবেদনপত্র নেওয়ার আগে তাই প্রার্থীকে প্রথমে ছুটতে হয় কাউন্সিলরের কাছে। শংসাপত্র নিতে লাইন পড়ে যায় কাউন্সিলরদের অফিসে। দীর্ঘ দিন ধরে আবেদন করার পরেও ভাতা না পাওয়ায় এলাকার আবেদনকারীদের অভিযোগও শুনতে হয় তাঁদের। হাওড়া পুরসভার এক কাউন্সিলর এ ভাবে লাগাতার ফর্ম দেওয়া নিয়ে আপত্তিও জানিয়েছেন বলে জেলা সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর।
কিন্তু আবেদন করার পরেও কেন ভাতা মেলে না?
হাওড়ার সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিক দেবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “ভাতা পাচ্ছেন, এমন কোনও ব্যক্তির মৃত্যু না হলে বা তিনি কোথাও চলে না গেলে কোটার জায়গা ফাঁকা হয় না। ফলে আবেদন করার পরে অপেক্ষা করা ছাড়া আর পথ থাকে না। এমনকী কেউ মারা গেলেও সে ব্যাপারে সরকারি ভাবে খোঁজখবর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, যখন কোটা নির্দিষ্ট আছে তখন প্রতি বছর ভাতা পাওয়ার জন্য এত শ’য়ে শ’য়ে আবেদনপত্র বিলি করা হয় কেন?
দেবকুমারবাবু বলেন, “প্রথমত, রাজ্য সরকার আমাদের ফর্ম দিতে নিষেধ করেনি। আর দ্বিতীয়ত, মানুষ আবেদন করতে চাইলে তাঁদের আমরা নিরাশ করব কেন? তা ছাড়া আমরা যে সব কোটাভুক্ত ব্যক্তিকে ভাতা দিই, তাঁদের তালিকা যে কেউ দেখতে চাইলে দেখিয়ে দিতে পারি।”
তা হলে কি এ ভাবেই চলবে? দেবকুমারবাবু জানান, মৃত্যু বা অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে কেউ কোটাভুক্তের তালিকা থেকে বাদ গেলে, সেই শূন্যস্থানে পরবর্তী প্রার্থীর ঠাঁই হয়। সেই হিসেবেই পরবর্তী আবেদনপ্রার্থীদের প্যানেল তৈরি রাখতেই ফর্ম দেওয়া চালু রয়েছে।
কিন্তু নভেম্বরের পর থেকে কেন ভাতা মিলছে না? জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক বলেন, “নভেম্বর পর্যন্ত সব টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই টাকা এসে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy