Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিলেন আবহাওয়াকে হারাল উৎসবের মেজাজ

মেঘলা আকাশ, সঙ্গে মাঝেমধ্যে টিপ টিপ বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কী! বছরের প্রথম দিনে এ সবের কোনওকিছুই তোয়াক্কা না করে ভরপুর আনন্দে মেতে উঠেছিল মানুষজন। নদীর ধার থেকে জঙ্গল, পিকনিক গার্ডেন থেকে খোলা মাঠ সব জায়গাতেই চড়ুইভাতিতে মেতেছিলেন লোকজন। হুগলির আরামবাগ, চুঁচুড়া, চন্দননগর থেকে হাওড়ার উলুবেড়িয়া মহকুমার বিভিন্ন পিকনিক স্পটগুলিতে এ দিন ঢল নেমেছিল মানুষের।

পিকনিকে চলছে ভোজের প্রস্তুতি। ফুলেশ্বরে গঙ্গার ধারে। —নিজস্ব চিত্র।

পিকনিকে চলছে ভোজের প্রস্তুতি। ফুলেশ্বরে গঙ্গার ধারে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

মেঘলা আকাশ, সঙ্গে মাঝেমধ্যে টিপ টিপ বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কী! বছরের প্রথম দিনে এ সবের কোনওকিছুই তোয়াক্কা না করে ভরপুর আনন্দে মেতে উঠেছিল মানুষজন। নদীর ধার থেকে জঙ্গল, পিকনিক গার্ডেন থেকে খোলা মাঠ সব জায়গাতেই চড়ুইভাতিতে মেতেছিলেন লোকজন। হুগলির আরামবাগ, চুঁচুড়া, চন্দননগর থেকে হাওড়ার উলুবেড়িয়া মহকুমার বিভিন্ন পিকনিক স্পটগুলিতে এ দিন ঢল নেমেছিল মানুষের।

গড় মান্দারনে পিকনিক করতে আসা বর্ধমানের লোহাই গ্রামের এক মধ্যবয়স্কা মহিলা গীতা মন্ডল জানালেন, “বংশানুক্রমে বৃহস্পতিবার আমাদের পরিবারে নিরামিষ রান্না হয়। তাই বলে পিকনিক তো আর বাদ যেতে পারে না। তাই পিকনিকেও সকলের জন্যই সবজি-সহ খিচুরির ব্যবস্থা। একটা দিন বাইরে সবাই মিলে হই-হুল্লোড় করে খাওয়াটাই আসল।” পুলিশের হিসাবে এবার গোঘাটের গড় মান্দারনে প্রায় পনেরো হাজার মানুষের ভিড় ছিল। খানাকুলের রাজা রামমোহন রায়ের আমবাগান, আরামবাগের চাঁদুর জঙ্গল, উলুবেড়িয়ার গড়চুমুক, গাদিয়াড়া সর্বত্রই পিকনিকের ঢল সামলাতে ব্যাপক পুলিশি আয়োজন ছিল। ছিল মদ্যপান ও নৌকাবিহার নিয়ে নিয়ে কড়া সতর্কতা।

আরামবাগ শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে গড় মান্দারনে প্রবেশের জন্য মাথাপিছু কর ১০ টাকা। অন্যদিকে আরামবাগ শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বন দফতরের চাঁদুর জঙ্গল। দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধের গায়ে ১৫৩ একর এলাকা নিয়ে এই জঙ্গল মূলত শাল, সেগুন ও শিশু গাছের। কোনও প্রবেশ কর নেই। গাড়ি পার্কিংয়েরও প্রচুর জায়গা। দেখা মেলে হনুমান, প্রচুর কাঠবেড়ালি আর শেয়াল। খানাকুলের রাজা রামমোহনের দুটি আমবাগান নিয়ে প্রায় ১৩ বিঘা এলাকায় পিকনিক করতে হলে মাথাপিছু প্রবেশ কর ৫ টাকা।

এ দিন সকাল থেকেই চন্দননগরের নিউ দিঘা, ছুটি পার্ক, কেএমডিএ পার্ক থেকে শুরু করে, হুগলির অ্যাকোয়ামেরিনা বা বলাগড়ের সবুজ দ্বীপ সব জায়গাতেই ভিড় জমতে থাকে। গড়চুমুকে পিকনিকের পাশাপাশি বাড়তি আকর্ষণ ছিল অবশ্যই মৃগদাব। সেখানে হরিণের দেখতে উপচে পড়ে ভিড়।

মেঘলা আকাশে শীতে জুবুথুবু আবহাওয়ায় কোথাও চলেছে গরম কফির কাপে তুফান তুলে জমিয়ে আড্ডা। কোথাও দেখা গিয়েছে, বয়সকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ছোটদের সঙ্গে ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টনে মেতে উঠেছেন কেউ কেউ। কেউ দোলনায় দুলেই কাটিয়েছেন সারাক্ষণ। দুপুরে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়ার পরে বিকেলের পড়ন্ত আলোয় বাড়িমুখো হয়েছে পিকনিক পার্টিরা।

ধনেখালির তুলসী সেন স্বামী মানসের সঙ্গে এসেছিলেন নিউ দিঘায়। তাঁর কথায়, ‘‘বছরের বিশেষ দিনগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকি। তাই আকাশের কথা না ভেবেই বেরিয়ে পড়েছি। সকলের সঙ্গে আনন্দ হচ্ছে ভালই।’’ ডানকুনির পল্লব সেন আবার রান্না করতে ভালবাসেন, পিকনিকে এসে এ দিনও স্বেচ্ছায় সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। দক্ষ হাতে মুগ ডাল, বেগুনি আর মুরগির মাংস রান্না করলেন। চন্দননগরেরই একটি পার্কে বেড়াতে আসা ডানকুনির তরুণী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে কিছু দূরে এই পিকনিক স্পট বা পার্কগুলি অনেকটা নিরিবিলি। তাই এই সব দিনে কলকাতায় না গিয়ে এমন জায়গায়ই পছন্দ করি।’’

সব মিলিয়ে বছরের প্রথম দিন আবহাওয়ার বাউন্সারকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিল আট থেকে আশির দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

south bengal celebration new year bad weather
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE