বিধায়কের এই রবার স্ট্যাম্প ঘিরেই বিতর্ক। উত্তরপাড়ায় নেতাজি ভবনে। ছবি: দীপঙ্কর দে।
বিধায়কের রবার স্ট্যাম্প ব্যবহার করে উত্তরপাড়ায় নেতাজির স্মৃতিধন্য বাড়ির তিনটি ঘরে তালা মেরে সিলমোহর লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগের তির তৃণমূল বিধায়ক অনুপ ঘোষালের দিকে। শুক্রবার এই নিয়ে দলেরই দুই গোষ্ঠীর লোকজন কাজিয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
হুগলির উত্তরপাড়া থানা লাগোয়া আদি পুরভবনে ১৯৩৮ সালের ১৭ জুলাই এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সেই সময়ে পুরপ্রধান ছিলেন লোকনাথ মুখোপাধ্যায়। বাম আমলে বাড়িটি অযত্নে পড়ে ছিল। উত্তরপাড়ার প্রবীণ নাগরিকদের দাবি ছিল, বাড়িটি মেরামত করে নেতাজি আসা সংক্রান্ত সমস্ত নথি সংরক্ষণ করা হোক। গড়ে তোলা হোক ‘নেতাজি ভবন’ নামে স্মারক মিউজিয়াম। এর পক্ষে ব্যাপক জনমতও গড়ে ওঠে। এই নিয়ে কথাবার্তা চলার সময়েই, প্রায় দেড় দশক আগে তৃণমূল ওই পুরসভা দখল করে। এর পরেই বাড়িটি ভেঙে নতুন করে গড়ার কাজ শুরু হয়। তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, ইতিমধ্যে বিধায়ক অনুপ ঘোষাল সেটি দখল করে পার্টি অফিস খুলে বসেন। তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিলের কাজকর্মও সেখান থেকেই হত। এ দিনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী ঘরগুলি দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা করে।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, বেগতিক বুঝে অনুপ-গোষ্ঠীর লোকজনই আগে শিলমোহর ভেঙে দিতে যান। আদৌ যে ঘর সিল করা হয়েছিল, তার প্রমাণ মুছে ফেলাই উদ্দেশ্য ছিল বলে বিধায়কের বিরোধীদের দাবি। তাঁরা শিলমোহর ভাঙতে বাধা দেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এসে না পৌঁছনো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ নিয়ে দু’পক্ষে বচসা বাধে। উত্তরপাড়া থানার আইসি অরিজিৎ দাশগুপ্ত বাহিনী নিয়ে এসে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেন।
খানিক বাদে সাংসদ ঘটনাস্থলে চলে আসেন। মিউজিয়াম তৈরির কাজ এখনও অনেকখানি অসম্পূর্ণ থাকলেও তিনি আবার ফিতে কেটে সেটির উদ্বোধন করে ফেলেন। মঞ্চে উঠে বক্তৃতাও করেন। ঘর নিয়ে কাজিয়া প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “উনি এমএল, উনি ঘর ব্যবহার করবেন। আমরাও করব।” তৃণমূলের জেলার সভাপতি তথা সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, “নেতাজির অনুষ্ঠান নিয়ে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটা উচিত নয়। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
তৃণমূলেরই এক বিধায়কের বক্তব্য, “বিধায়কের রবার স্ট্যাম্প আমরা যত্রতত্র ব্যবহার করতে পারি না। এর একটা মর্যাদা আছে। এর অপব্যবহার আইনভঙ্গের সামিল।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এই নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও কিছু বলার সময় আসেনি।”
বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও অনুপবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রাতে ফোন ধরে তাঁর মেয়ে অনুপমা ঘোষাল দাবি করেন, “বাবা বাড়িতে মোবাইল রেখেই উত্তরপাড়া চলে গিয়েছেন।” বিধায়কের শিলমোহর দিয়ে ঘরে তালা মারা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “ওখানে বসে তো আমিও কাজ করি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy