হুগলি জেলায় কলেজ ভোটে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এ বারও ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৩২টি কলেজের মধ্যে ৩১টিতে ক্ষমতা দখল করেছে তারা। সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে গত বছরের তুলনায় কোনও হেরফের না হলেও রাজ্য জুড়ে সারদা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কোণঠাসা শাসক দল এতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। একমাত্র শ্রীরামপুর গার্লস কলেজে দাঁত ফোটাতে পারেনি টিএমসিপি। সেখানে তারা এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র কাছে হেরেছে।
হুগলিতে এ বার তিন দফায় কলেজের ভোট হয়েছে। শেষ দফার ভোট হয় গত ২৮ জানুয়ারি। আগের দু’দফায় কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে না হলেও শেষ দফায় শ্রীরামপুর গার্লস কলেজ এবং শ্রীরামপুর কলেজে তারা কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়ে টিএমসিপি। শ্রীরামপুর কলেজে তারা লড়াইয়ে উতরে গেলেও শ্রীরামপুর গার্লসে অবশ্য একটি আসনও পায়নি তারা। এখানে ১৮টির আসনের মধ্যে লড়াই হয় ১৫টিতে। সবক’টিতেই জয়ী হয় ডিএসও। দলের বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি অবশ্য গোড়া থেকেই অভিযোগ করে আসছিল, টিএমসিপি তথা তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’-এর কারণে বিভিন্ন কলেজে তারা মনোনয়নপত্র তুলতেই পারেনি। এমনকী শ্রীরামপুর গার্লসের ক্ষেত্রেও ডিএসও-র জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর মণ্ডল বলেন, “ওরা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল। তা সত্ত্বেও সাধারণ ছাত্রীরা আমাদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।”
দীপঙ্করের দাবি, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে বহু ছাত্রী ভোট দিতে আসতে পারেননি। না হলে জয়ের ব্যবধান আরও বাড়ত।” শ্রীরামপুর গার্লস কলেজে একটিও আসন না পাওয়া নিয়ে জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি কৌশিক শীল বলেন, “ওখানে এ বারই প্রথম ভোটে লড়লাম আমরা। অন্য কলেজের মতোই সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করব ওখানেও।”
ঘটনা হল, রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে আরামবাগ মহকুমা বা তারকেশ্বর, জাঙ্গিপাড়া, ধনেখালির মতো ‘সন্ত্রাস কবলিত’ জায়গায় বিরোধীদের সংগঠন এখনও ততটা চাঙ্গা নয়। গত দু’বছরের মতোই এ বারও ওই সব জায়গায় বিরোধীদের অস্তিত্ব কার্যত টের পাওয়া যায়নি। তবে অন্যত্রও ভাল ফল করতে পারেনি এসএফআই, এবিভিবি-র মতো ছাত্রসংগঠন। জেলায় ছাত্র পরিষদের সংগঠনের অবস্থাও ভঙ্গুর। তবে নিজেদের সংগঠনের দুর্বলতার কথা মানলেও নির্বাচনে ‘টিএমসিপি-র সন্ত্রাস’-এর বিরুদ্ধেই মূলত আঙুল তুলছে বিরোধীরা।
এবিভিপি-র জেলা প্রমুখ অরবিন্দ নন্দীর অবশ্য দাবি, “অনেক কলেজেই ভোটে লড়ার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। কিন্তু টিএমসিপি বহিরাগতদের এনে আমাদের মারধর করেছে। শ্রীরামপুর কলেজে আমাকে মারধর করা হয়েছে। সেখানে আমাদের এক কর্মীর বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।”
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক পার্থ দাসের দাবি, “টিএমসিপির আক্রমণের মুখে সমস্ত শক্তি খরচ করতে চাইনি। দু’টি কলেজে লড়াইয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মধ্যে খন্যান কলেজে আমাদের মেরে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রীরামপুর কলেজে আক্রমণ প্রতিহত করে ১৩টি আসনে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছি।” তাঁর দাবি, শ্রীরামপুর কলেজের লড়াই ছেলেমেয়েদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। টিএমসিপি-র আক্রমণ সামলাতে আমরাও তৈরি হচ্ছি।”
‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়ে জেলা টিএমসিপি সভাপতি শুভজিৎ সাউয়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা আগাগোড়াই বলে এসেছি এসএফআইয়ের সংগঠন তলানিতে। এবিভিপি-র অস্তিত্ব রয়েছে সাংবাদমাধ্যমে। নির্বাচনে সেটাই ফের প্রমাণিত হল।’’ তাঁর দাবি, “যাঁরা বলছেন সন্ত্রাস হয়েছে, তাঁরা কেউ কলেজের গেট পর্যন্ত আসেননি। যেখানে এসেছে, সেখানে নির্বিঘ্নেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এখন মান বাঁচাতে সংবাদমাধ্যমকে ফোন করে সন্ত্রাসের গল্প বলেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy