প্রতীকী ছবি।
ইমারতি দ্রব্য জোগান দিয়ে ঠিকাদারেরা টাকা পাননি বলে অভিযোগ। ফলে পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজে তাঁরা আর মালপত্র দিতে রাজি নন। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ হতে বসেছে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ।
হাওড়া জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, গত প্রায় এক বছর ধরে ইমারতি দ্রব্যের টাকা আসছে না। জেলায় উন্নয়নমূলক কাজগুলিও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাকা চেয়ে আমরা কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখছি। আশা করি সুরাহা হবে শীঘ্রই।’’
নিয়ম অনুযায়ী, প্রশাসন একশো দিনের প্রকল্পের জন্য যে টাকা পায়, তার ৬০ শতাংশ খরচ করতে হয় জবকার্ডধারীদের মজুরির জন্য। বাকি ৪০ শতাংশ টাকা খরচ করা হয় ইমারতি সামগ্রী কেনার জন্য। তা দিয়ে তৈরি হয় গ্রামের ঢালাই রাস্তা, জৈব সার প্রকল্পের পাতকুয়ো, পোলট্রি প্রভৃতি।
অভিযোগ, গত এক বছর ধরে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে যে সব ঠিকাদার ইট, বালি, সিমেন্ট-সহ নানা রকমের নির্মাণ সামগ্রীর জোগান দেন, তাঁরা এ বাবদ টাকা পাননি। পঞ্চায়েতগুলির অভিযোগ, টাকা না-পাওয়ায় নতুন করে মালপত্র দিতে রাজি হচ্ছেন না ঠিকাদারেরা। এই অবস্থায় অনেক পঞ্চায়েত ইমারতি দ্রব্যের জোগান চেয়ে টেন্ডার ডেকেও বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে জবকার্ডধারীরাও নিয়মিত রোজগার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রাও পিছিয়ে যেতে বসেছে। পোলট্রি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বহু যুবক। একই ভাবে সময় মতো জৈবসার প্রকল্প তৈরি করা যাচ্ছে না পাতকুয়ো তৈরি না হওয়ায়।
সব থেকে বেশি সমস্যা হচ্ছে ঢালাই রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে। কারণ, মাটি কাটার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পঞ্চায়েত বিকল্প হিসাবে ঢালাই রাস্তা তৈরির দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এখানেও ইমারতি দ্রব্যের জোগান না থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে।
আমতা ১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসের পর থেকে ইমারতি দ্রব্যের খাতে কোনও টাকা আসেনি। ফলে ঠিকাদারেরা কাজ করতে চাইছেন না।’’ এই পঞ্চায়েতে ইমারতি দ্রব্যের জোগান দিয়েছিলেন কল্লোল মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বকেয়া। কী ভাবে কাজ করব? আমারও তো ঘরসংসার আছে।’’ শুধু রসপুর পঞ্চায়েতেই ইমারতি দ্রব্যের খাতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বকেয়া আছে বলে জানালেন জয়ন্ত।
আমতা ১ ব্লকেরই সিরাজবাটী পঞ্চায়েতে ঢালাই রাস্তা, পোলট্রি এবং জৈব সার প্রকল্পে পাকা পাতকুয়ো তৈরির আটটি পৃথক প্রকল্পে সম্প্রতি ইমারতি দ্রব্যের জোগান চেয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার টেন্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ দিনে ঠিকাদারেরা এক যোগে জানিয়ে দেন, তাঁরা আর মালপত্র জোগান দিতে পারবেন না। ফলে টেন্ডার বাতিল করতে হয়। পঞ্চায়েত প্রধান তাপস দত্ত বললেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ টাকা ঠিকাদারদের বকেয়া পড়ে আছে। এই অবস্থায় নতুন করে আর তাঁরা বাকিতে জিনিসপত্র দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। কাজ করার জন্য তাঁদের তো আর চাপ দেওয়া যায় না।’’
হাওড়ার ১৫৭টি পঞ্চায়েতেই এই অবস্থা চলছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানালেন, বিষয়টি তাঁরা রাজ্য স্তরে জানিয়েছেন। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের রাজ্য সেলের পক্ষ থেকে সমস্যাটির কথা স্বীকার করা হয়। সেলের এক পদস্থ কর্তা জানান, শুধু হাওড়া নয়, রাজ্য জুড়ে এই পরিস্থিতি চলছে। থমকে গিয়েছে অনেক কাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy