আইন বলছে, নির্বাচনের জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প প্রভাবিত হবে না। শ্রমিকদের কাজ দিতে হবে। কিন্তু হুগলিতে প্রায় দু’মাস ধরে থমকে রয়েছে ওই প্রকল্পের কাজ। ক্ষোভ বাড়ছে শ্রমিকদের।
পঞ্চায়েত দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অথর্বর্ষে গত ১ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত গড়ে মাত্র ১৭ দিন কাজ হয়েছে জেলার ১৮টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েত এলাকায়। রাজ্যের গড় সেখানে প্রায় ২১ দিন।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়েছিল গত ১০ মার্চ। তার পর থেকে সরকারি কর্মীরা ভোটের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তার জেরে ১০০ দিনের কাজ-সহ জেলার বহু প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। হুগলিতে গত ৬ মে ভোট হয়েছে। তার পরেও ১০০ দিনের কাজে গতি আসেনি। জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্পে কাজের চাহিদা প্রচুর। কিন্তু শ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন না। এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ জমছে।
আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েত প্রধান সোহরাব হোসেনের অভিযোগ, “এলাকার ৮০ শতাংশ গরিব মানুষ কাজ চেয়ে প্রতিদিন হন্যে হয়ে ঘুরছেন। প্রকল্পটির আইনের প্রসঙ্গ তুলে আমরা জেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু জেলা থেকে কর্মীদের ব্যস্ততার কথা জানিয়ে ভোট শেষ না-হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করা যাবে না বলে দেওয়া হয়েছে।” একই অভিযোগ জেলার বহু পঞ্চায়েতের প্রধানদেরও।
ব্লক প্রশাসনের কর্তারা মানছেন, নির্বাচনী বিধির আওতায় এই প্রকল্পটি নেই। কিন্তু পঞ্চায়েত স্তরের নির্মাণ সহায়ক-সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মী (যাঁরা মাস্টার রোল, প্রকল্পটির জিও ট্যাগিং ইত্যাদি করেন) ভোটের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাই প্রকল্পটি গতিহীন। এ বার কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একেবারেই যে কাজ হয়নি, তা নয়। কিছু কাজ হয়েছে। কর্মীরা ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকায় কাজে গতি ছিল না। ভোট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ মিটলে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। শ্রমিকদের ১০০ দিন করে কাজ দিতে কোনও অসুবিধা হবে না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির ২০৭টি পঞ্চায়েতের জন্য চলতি অর্থবর্ষে শ্রম বাজেট বা কর্মদিবস অনুমোদন হয়েছে মোট ২ কোটি ৮৪ লক্ষ ৯ হাজার ৩৩৩ দিন। প্রতি মাসে কাজের লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন, এপ্রিল মাসে ১৪ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৯ দিন, মে মাস পর্যন্ত সেই কাজ হবে ২৫ লক্ষ ৫১ হাজার ১৭৬ দিন, জুন মাস পর্যন্ত অব্দি হবে ৩৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯২৯ দিন এবং এ ভাবেই প্রতি মাসে বাড়তে থাকবে কাজের দিন। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৮১ দিন। ব্লক প্রশাসনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই কাজগুলির অধিকাংশই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের সঙ্গে মেলবন্ধনে। নতুন কোনও কাজ শুরু হয়নি।
প্রকল্পের আইনে নির্দিষ্ট ভাবে বলা আছে জবকার্ড আছে এমন পরিবারের সদস্য কাজ চেয়ে আবেদন করলে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ দিতে হবে। পঞ্চায়েতের হাতে কাজ না-থাকলে তাঁকে অন্যত্র কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তারপরেও কাজ দিতে না-পারলে ওই শ্রমিকের আবেদনের ভিত্তিতে যতদিন না কাজ দেওয়া যাবে, ততদিন অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি হিসেবে এক-চতুর্থাংশ বেকার-ভাতা দিতে হবে। এখনও কেউ সেই আবেদন করেননি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy