Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

১০০ দিনে সেরা রাজ্যে মজুরি অমিল

কাজের ‘জোয়ার’ রয়েছে রাজ্যে। কেন্দ্রের স্বীকৃতিও মিলছে। কিন্তু টাকা কই?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

কাজের ‘জোয়ার’ রয়েছে রাজ্যে। কেন্দ্রের স্বীকৃতিও মিলছে। কিন্তু টাকা কই?

গত নভেম্বর মাস থেকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে এ রাজ্যের শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না। বকেয়ার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। মজুরি না-পেয়ে শ্রমিকেরা কাজ করতে বেঁকে বসছেন। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ২০০০ কোটি টাকারও বেশি মজুরি বাবদ বকেয়া রয়েছে। বারবার রাজ্যের তরফে টাকা চেয়ে চিঠি লেখা হলেও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।

শুধু হাওড়ায় আমতা-১ ব্লকের কথাই ধরা যাক। এই ব্লকে ওই প্রকল্পে চার মাসে ধরে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। সম্প্রতি এই ব্লকের উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রধানেরা। তাঁদের অভিযোগ, টাকা না-মেলায় জবকার্ডধারীদের কাছে তাঁরা মুখ দেখাতে পারছেন না।

ওই ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের বকেয়ার পরিমাণ ১৬ লক্ষ টাকা। উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বল‌েন, ‘‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৬০ দিন। কিন্তু জবকার্ডধারীরা কাজ করতে চাইছেন না। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না। কেন্দ্রের হাতে সরাসরি বিষয়টি চলে যাওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের মজুরি পেতে একটু দেরি হতোই। কিন্তু এ বারের মতো দেরি কখনও হয়নি।’’

১০০ দিনের কাজে এ বার অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে রাজ্য। রাজনৈতিক বিবাদ যতই থাক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সাফল্যের পুরস্কার দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। চলতি বছরে সেরা কাজের জন্য ওই প্রকল্পে শেষ দু’মাসের জন্য অতিরিক্ত ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। ওই টাকায় আরও তিন কোটি শ্রমদিবস তৈরি করা যাবে। কিন্তু কোথায় টাকা?

এক সময়ে প্রকল্পটিতে কেন্দ্র প্রথমে রাজ্য সরকারকে টাকা দিত। রাজ্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে পঞ্চায়েতগুলিতে সেই টাকা পাঠাত। পঞ্চায়েতগুলি আবার জবকার্ডধারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে দিত। বছর দুয়েক ধরে কেন্দ্র সরাসরি জবকার্ডধারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠায়। এর জন্য পঞ্চায়েতগুলি তাদের নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে কোন প্রকল্পে কতজন কাজ করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে যাতে টাকা দিয়ে দেওয়া তার আগাম অনুমতি দিয়ে রাখে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফান্ড ট্রান্সফার অর্ডার’ বা এফটিও। গত নভেম্বর মাস থেকে পঞ্চায়েতগুলি বিভিন্ন ব্যাঙ্কে এফটিও দিয়ে রাখলেও কেন্দ্র থেকে টাকা না-আসায় শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না।

রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বরের গোড়ায় শেষবার অল্প কিছু টাকা এসেছিল। টাকা আটকে থাকলে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বহু ক্ষেত্রে। প্রকল্পের রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের কাছে বারবার চিঠি লিখছি। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, এপ্রিল মাসে সব বকেয়া টাকা একসঙ্গে দিয়ে দেওয়া হবে।’’ ওই দফতরের কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, রাজ্য যে ভাবে কাজ এবং শ্রমদিবস সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না কেন্দ্র।
তাতেই দেরি।

এখন দেখার, জট কবে কাটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

100 days works
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE