Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

তাঁতি না হয়েও মিলল ক্ষতিপূরণ

গত বন্যায় আরামবাগের ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতিরা অনেকেই ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় বিক্ষোভও দেখানো হয়েছিল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৫
Share: Save:

গত বন্যায় আরামবাগের ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতিরা অনেকেই ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় বিক্ষোভও দেখানো হয়েছিল। এরই মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষর পরিবারের ২ জন ক্ষতিপূরণ পেয়ে গেলেন। অন্য ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, যে ২জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাঁদের সঙ্গে তাঁত শিল্পের সঙ্গে বিন্দুমাত্র যোগও নেই।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির শিশু ও নারী উন্নয়ন, জনকল্যাণ ও ত্রাণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কাকলি ঘোষের বাবা জহরলাল ঘোষ এবং বোন পিয়ালী ঘোষের নামে ৮ হাজার ২০০ টাকা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। বিডিও বিশাখ ভট্টাচার্য বলেন, “কীভাবে এমন হল তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। শুনানি ডাকা হবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে টাকা ফেরত নেওয়া হবে।”

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা প্রকল্পে গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতিদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়। আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির ১৫টি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে তাঁত শিল্প প্রধান গৌরহাটি ১ ও ২, সালেপুর ১ ও ২, হরিণখোলা ১ ও ২ এবং মায়াপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকা থেকে মোট ২১২ জনের তালিকা পাঠানো হয়। তাঁরা সকলেই ক্ষতিপূরণও পান। তবে অনেক তাঁতিরই অভিযোগ ছিল, ওই তালিকায় তাঁদের নাম পাঠানোই হয়নি। ফলে ক্ষতিপূরণ না পেয়ে প্রশাসনের কাছে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন অনেকে।

এমন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক উপভোক্তা বাছাই করার কাজে পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছ থেকে পঞ্চায়েত সমিতির কাছে সুপারিশ আসার কথা। সেই সুপারিশের তালিকা পঞ্চায়েত সমিতির সংশ্লিষ্ট স্থায়ী সমিতি থেকে পাশ হলে অর্থ স্থায়ী সমিতি অনুমোদন দেয়। তারপরেই সেই তালিকায় বিডিওর সিলমোহর পড়ে। এক্ষেত্রে মায়াপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার হাটবসন্তপুরের কাকলি ঘোষের বাবা এবং বোনের নাম কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতির তালিকায় এল?

তৎকালীন প্রধান তথা এ বারের উপপ্রধান তুষারকান্তি দাস বলেন, “পঞ্চায়েত থেকে কোনও তালিকাই যায়নি। পঞ্চায়েতকে পুরো অন্ধকারে রেখে এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে পঞ্চায়েত সমিতি থেকেই কিছু লোককে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।” একইসঙ্গে তাঁর দাবি, “কাকলি ঘোষের পরিবারের সঙ্গে তাঁতের কোন যোগ না থাকলেও পরিবারটি অত্যন্ত দুঃস্থ। অন্য কোনও প্রকল্পে তাঁর পরিবারকে সাহায্য করা যেতেই পারত। তাতে কারও আপত্তিও থাকত না।”

ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতির তালিকায় কাকলির পরিবারের দু’জনের নাম এবং টাকা পাওয়া নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী ক্ষুদ্রশিল্প, বিদ্যুৎ ও অচিরাচরিত শক্তি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ টাট বলেন, “কাকলি নিজেই তাঁদের আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। বিষয়টা সভাপতি সহ সকলেই জানতেনও।” তৎকালীন সভাপতি শিশির সরকার বলেন, “আমার অজান্তেই এটা হয়েছে। খুব কম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা পাঠানোর দরকার ছিল। তালিকা না দেখেই সই করে দিয়েছিলাম।”

অভিযুক্ত বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ কাকলি ঘোষ এ বারও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। আজ বুধবার নতুন বোর্ড গঠনের কথা রয়েছে। ফের তাঁকে কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে নির্বাচিত করা হবে কিনা তা নিয়ে দলের অন্দরেও দ্বন্দ্ব আছে। এই পরিস্থিতে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কাকলির সাফাই, “আমার বাবা এবং বোনের নাম কী ভাবে তালিকায় গেছে আমার জানা নেই।” তাঁতের সঙ্গে তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যের যোগ নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arambag Compensation আরামবাগ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE